তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের ১৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের। সংঘর্ষ শুরুর কিছু সময় পরেই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশসহ উপস্থিত হন ডিএমপির রমনা জোনের তৎকালীন এডিসি হারুন অর রশিদ৷
সংঘর্ষের সময় এডিসি হারুন পুলিশ সদস্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন। সেসময় এক পুলিশ সদস্য গুলি শেষ হয়ে গেছে বললে তাকে চড়ও মারেন এডিসি হারুন। যার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের রাবার বুলেটে গুরুতর আহত হন ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোশারফ হাজারী। তার চোখে রাবার বুলেট লাগার পর আর দৃষ্টি ফিরে পাননি ঢাকা কলেজের এই ছাত্র।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় দৃষ্টি হারানো মোশারফ হাজারীর। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, আমি ঢাকা কলেজের হলে থাকতাম। ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সে সময় বলা হয় আমাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে আর চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে। আমি মাত্র এক লাখ টাকা পেয়েছি। আমার দুই চোখই অন্ধ। মাথায় ৩০-৩৫টি ছররা গুলি এখনো আছে। এগুলো আর বের করা সম্ভব নয়। আমাকে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
আরো পড়ুন : বরখাস্ত হারুনের ওপর আগে হামলা চালান রাষ্ট্রপতির এপিএস : ডিবি প্রধান
নিজের পরিবারের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েও কোনো লাভ হয়নি জানিয়ে মোশারফ বলেন, আমি উন্নত চিকিৎসার জন্য দুবার ভারতে গিয়েছি পরিবারের জমি বিক্রি করে। কোনো লাভ হয়নি। চোখে দেখার আশা ছেড়ে দিয়েছি। আমি এখন অসহায়। আমাকে দেখার মতো কেউ নেই। এখন সারাদিন বাড়িতেই বসে থাকি। যেহেতু চোখে দেখি না তাই কোনো কাজও করতে পারি না। বাড়িতে ছোট বাচ্চা (ভাতিজি-ভাতিজা) আছে। তাদের সঙ্গেই বসে সময় কাটে ৷
মোশারফ বলেন, আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগে এ ঘটনা ঘটলো। আমি সুস্থ থাকলে আজ হয়তো চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতাম। সে সুযোগও আর নেই। আমি নিজেই তো অসহায়। সরকার আমার জন্য কোনো কর্মের ব্যবস্থা করলে আমি উপকৃত হতাম।
সম্প্রতি আলোচনায় আসা এডিসি হারুনের কথা জিজ্ঞেস করলে মোশারফ বলেন, আমার ঘটনার পর জানতে পারি এডিসি হারুনের নির্দেশে গুলি করা হয় ৷ আমি কার কাছে বিচার চাইবো? পুলিশ-তো সরকারি বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডিও করতে পারবো না। এসব ঘটনার বিচার হওয়া দরকার।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের কর্মচারীদের দুই দিনের সেই সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজে প্রশাসন, ছাত্রলীগ নেতা, শিক্ষক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, নিউমার্কেটের ব্যাবসায়ী প্রতিনিধি ও পুলিশের মধ্যে সায়েন্সল্যাবে দীর্ঘ সময় বৈঠক হয়। বৈঠকে রমনা জোনের এডিসি হারুন এবং নিউমার্কেট থানার তৎকালীন ওসিকে বদলির সুপারিশ করা হয়। দাবি মেনে নিয়ে ঘটনার পর নিউমার্কেট থানার ওসির বদলি হলেও নিজ পদে বহাল থাকেন এডিসি হারুন।
সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন বেশ কয়েকজন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মীর। তারা বলছেন, সংর্ষের পর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল এডিসি হারুনকে যেন বদলি করা হয়। পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। পরে তা কার্যকর হয়নি। ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পিটিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন এডসি হারুন। সাময়িক বরখাস্তও হয়েছেন। এই পুলিশ কর্মকর্তার বিচার হওয়া দরকার বলে মনে করেন এসব ছাত্রলীগ নেতারা।
সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, সরকারি আর্থিক সহয়তা প্রাপ্তির বিষয়টি একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে কিছু আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। মানবিক কারণে তার আরও সাহায্য প্রয়োজন। তবে বাকি প্রক্রিয়া কী অবস্থায় আছে আমার জানা নেই।