নওগাঁর আত্রাইয়ে নিখোঁজের ২১দিন পর ইব্রাহিম (৬) নামে এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। এঘটনায় বুলবুল সোনার (৩১) নামের শ্রীধরগুরনই দাখিল মাদরাসার খণ্ডকালীন শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে গ্রেফতার বুলবুল সোনারের তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার বিশা ইউনিয়নের শ্রীধরগুরনই গ্রামের পারাপার ঘাটের দক্ষিণ পাশ থেকে ওই শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
বৃহষ্পতিবার বিকেলে নওগাঁর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক এসব কথা জানান। নিহত শিশু ইব্রাহিম উপজেলার শ্রীধরগুড়নই গ্রামের হযরত আলীর ছেলে ও গ্রেফতারকৃত বুলবুল সোনার একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ১০ নভেম্বর শিশুটি নিখোঁজ হলে তাকে খুঁজে না পেয়ে তার বাবা থানায় একটি ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে রাতের জানালা দিয়ে শিশুটির বাবার শয়নকক্ষে একটি চিঠি পান। তাতে বলা হয় নতুন একটি সিম ও মোবাইল কিনে শিশুর বাবা যেন বাবুর দোকানের সামনে তুলার মধ্যে রেখে আসেন এবং ৬ লাখ টাকা রেডি রাখে। এরপর ২৬ নভেম্বর ১০টার পর থেকে অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে শিশুটির বাবার মোবাইল ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। শিশু ইব্রাহিমের বাবার বক্তব্য, স্থানীয় সোর্স এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে একই গ্রামের আব্দুল জলিল সোনারের ছেলে বুলবুল সোনার এর সঙ্গে জড়িত। পরের দিন বিকেলে থানা পুলিশ বুলবুল সোনারকে আটক করলে নিহতের বাবা হযরত আলী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের পর বুলবুল সোনার পুলিশকে জানায় সে একজন মুদি দোকানদার এবং স্থানীয় শ্রীধর গুরনই দাখিল মাদরাসার খণ্ডকালীন শিক্ষক। তার বিভিন্ন জায়গায় ঋণ ছিল। সে সব টাকার জন্য তাকে বারবার চাপ দেয়া হচ্ছিলো, সে ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই সে শিশুর বাবার কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করে। তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।তিনি আরও বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে শিশুটি গত ১০ নভেম্বর দুপুরে তার দোকানে গিয়ে পাঁচ-ছয়টি বেলুন ফাটায়। সে শিশু ইব্রাহিমকে দোকান থেকে চলে যেতে বললে সে চলে না গিয়ে আরও বেলুন চাইলে বুলবুল রাগ করে শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করে চা স্টলে পেছনে ছাইয়ের স্তুপের মধ্যে বস্তাবন্দি করে লাশ পুতে রাখে। পরবর্তীতে ১৮ নভেম্বর বালতিতে করে শিশুটির লাশ পাশে আত্রাই নদীর ভেতরে পুঁতে রেখে একটি বড় কংক্রিটের স্লাব দিয়ে চাপা দিয়ে রাখে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে বুলবুলের দেখানো স্থান থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ আসামিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠাবে বলেও জানানো হয়েছে।