নির্বাচনকালীন সময় মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্ব ইসির (নির্বাচন কমিশন) হাতে চান বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রি. জে. (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘নির্বাচন কমিশনে কেমন সংস্কার চাই’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন যাদেরকে নিয়োগ দেয়, তাদের ক্ষেত্রে ইসি যে রিপোর্ট দেয় সেটিই যেন চূড়ান্ত হয়। এটি জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার যেন হস্তক্ষেপ না করে। নির্বাচনের সময় মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর খবরদারির ক্ষমতা ইসিকে দিতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এটা একদিনের বিষয় নয়। এখানে সহিংসতা মুক্তভাবে প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোট গণনা হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া সঠিক হতে হবে। যে নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করে না, সেটা সংবিধানের লঙ্ঘন। সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহায়তা না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দল সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজসহ আরও অংশীজনদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন। নিরপেক্ষ, সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। নির্বাচন কমিশন নিয়োগের এখতিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের নয়। এ সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের সমস্যা অনেক জায়গায়। বর্তমান যে সংবিধান এই সংবিধানের আর্টিকেল ৫৯ এ বলা হয়েছে স্থানীয় সরকার, আর্টিকেল ৬০ তে বলা আছে স্থানীয় শাসন। পরপর দুটি ধারায় একই কথা বলা আছে। এই জিনিসগুলো বহু বছর ধরে আবর্জনা জমে আছে। এখানে একে অপরের দোষারোপের চেয়ে সলিউশনটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। সেজন্য আমরা বলি সব জায়গায় কিছু কিছু নতুন জিনিস সংযুক্ত করা দরকার। যারা নির্বাচনের প্রার্থী হবেন তারা নির্বাচন কমিশনের সাথে একই মঞ্চে দাঁড়াবেন এবং তাদের লক্ষ্যের কথা বলবেন। তাহলে লুকোচুরি বিষয়টা থাকবে না। আর একটা হচ্ছে রুল অফ ল, এটা হওয়া উচিত রোল অফ জাস্টিস। পরপর দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এটা বিএনপি'র প্রস্তাব। দুবার কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না এটাও বিএনপি'র প্রস্তাব।
তিনি আরও বলেন, বদলি, দায়িত্ব প্রদান এই জিনিসগুলোর সাথে আরেকটা জিনিস যুক্ত করতে হবে। নির্বাচন চলাকালীন সময় কোন উচ্চ আদালতে বা আদালতে নির্বাচন কমিশনের মতামত না নিয়ে কোন রিট গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচন কমিশনকে যদি এই ক্ষমতা দেওয়া হয় তাহলে তারা ন্যায়পরায়ণ থাকতে বাধ্য হবে। নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহিতা বেশি করে নির্ধারণ করা গেলে কার্যকরিতা বেশি হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশনগুলো কিভাবে কাজ করবে সেটা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নির্বাচন সুষ্ঠু করার আগ্রহ নেই। তারা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেতে চায়। অন্তত ৩ থেকে ৫টি নির্বাচন, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে হবে। না ভোটের বিধান থাকা দরকার। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন দরকার। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন সহজ করা দরকার।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমান সংবিধান বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে। ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে বাজেট দিতে হবে।
সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নানকে গ্রেফতারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনারা মান্নান সাহেবের মতো ভদ্র মানুষকে গ্রেফতার করলেন অথচ ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেফতার করতে পারলে না। সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেফতার করে বিদেশের চাপে ছেড়ে দিলেন কেন? এই নীতি থেকে বের হতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবকিছুর আগে এদেশের মানুষের তথ্য যারা হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিময় বিক্রি করে দিয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, অন্য সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন ব্যবস্থাকে সংস্কার করাই এ সরকারের মুখ্য দায়িত্ব। মুখ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে নির্বাচনী তফসিল দিতে হবে। এ সরকারের অধীনে যে ভোট হবে সেটা নিঃসন্দেহে সুষ্ঠু ভোট হবে। কিন্তু এরপরে যে নির্বাচনগুলো হবে সেগুলোও যাতে সুষ্ঠু হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল আদিব বলেন, আমরা মনে করি আগামী নির্বাচনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন যত শক্তি আছে তারা মেরুকরণ করছে। আমরা বিপ্লবের পরপর দেখেছি যারা এই গণহত্যার সাথে জড়িত ছিল তাদের বিচারের দাবি করছে। তাদেরকে কিভাবে আটক করা যায় সে দাবিগুলো করছে। কিন্তু দেড় মাস যেতে না যেতেই নির্বাচন কেন্দ্রিক তাদের সভা সমাবেশে বক্তব্যগুলো কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ফলে বিচারের চেয়ে পরবর্তীতে ক্ষমতায় যাওয়ার বাসনা এবং চাহিদা তাদের কাছে বেশি মুখ্য হয়ে উঠেছে। অভ্যুত্থানের প্রধান দাবি ছিল দেশে কোন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থাকবে না। এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে আগামীতে বিএনপি অথবা অন্য কেউ ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা কিন্তু ফ্যাসিবাদী দানবে রূপান্তর হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে কেউ যাতে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সবাইকে একটা জাতীয় ঐক্য অনুযায়ী কাজ করতে হবে।