দৈনিকশিক্ষাডটকম, মাদারীপুর : মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে নির্বাচনি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে নৌকার প্রার্থীর বৈঠক করায় ৩৫ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদরের একাংশ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য শাজাহান খানের নিজ বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানরাও উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই সভার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তিন মিনিট তিন সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের উদ্দেশে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবায়দুর রহমান খান বক্তব্য দিচ্ছেন। পাশে বসা ছিলেন শাজাহান খান।
ওবায়দুর রহমান খান বলেন, ‘আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা শাজাহান খান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নির্দেশিত হয়েছেন যে তিনের (মাদারীপুর-৩) আসনের ওপরে গুরুত্ব দেয়ার জন্য এবং তিনে (মাদারীপুর-৩) প্রচার চালানোর জন্য। সেই হিসেবে আমরা কিন্তু তিনের (মাদারীপুর-৩) ওপরে বেশি দায়িত্ব পালন করতেছি। আপনারাও তিনে (মাদারীপুর-৩) সেইভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনে (মাদারীপুর-৩) যদি আমরা গোলাপ ভাইকে নির্বাচিত করতে পারি, তা হলে দাদা (শাজাহান খান) ও গোলাপ ভাই মিলে দীর্ঘদিনের জন্য মাদারীপুরকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসতে পারবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে সভার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান হঠাৎ আমাদের তাদের বাসায় ডেকেছে। তিনি আমাদের মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমাজের সভাপতি। সভাটি হওয়ার কথা ছিল উপজেলা পরিষদে, কিন্তু সেটা না হয়ে এমপি (শাজাহান খান) মহোদয়ের বাসায় মিটিং হয়েছে।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাজাহান খান তার নির্বাচনি এলাকার পছন্দের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রিসাইডিং ও পোলিং অ্যাজেন্ট করার অপচেষ্টা করছে। যেহেতু সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন আমাদের মাদারীপুর-৩ আসনের মধ্যে পড়েছে। তাই সে সেখানে নিজের প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমরা ইতিমধ্যে শাজাহান খানের নির্বাচনি এলাকার কোনো লোককে প্রিসাইডিং ও পোলিং অ্যাজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাতে না হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আর ২৫ ডিসেম্বর শাজাহান খানের বাসায় যে সব শিক্ষককে নিয়ে মিটিং হয়েছে, তারা সবাই শাজাহান খানের কর্মী। তারা নির্বাচনে কোনো দায়িত্ব পালন করলে সেখানে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাই তাদেরসহ আরও যারা আছে, সবাইকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও থেকে পোলিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে আশা করি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিম বলেন, ‘যারা ওই মিটিং ছিলেন আমাদের জেলা স্যার তাদের সবাইকে শোকজ করেছেন। এ বিষয়ে স্যার ভালো বলতে পারবেন।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমদ আলী জানান, বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে এবং আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত করে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।