করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট স্থবিরতা ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী চাইলে বর্তমান সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি করতে পারেন বলে প্রস্তাব করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ক ম মোজাম্মেল হক। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি মন্তব্য করেন। আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, করোনা মহামারির কারণে দেশ যে কঠিন সময় পার করেছে, অর্থনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে যে সংকটময় মুহূর্ত আমরা অতিক্রম করেছি সেটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আমি মনে করি, এই সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো দরকার নাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, করোনার দুর্যোগের কারণে এ সরকার দুই বছর ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। তাই মহাদুর্যোগের বিষয়টি বিবেচনায় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী চাইলেই বর্তমান সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি করতে পারেন। অন্তত দুই বছর মেয়াদ তো বৃদ্ধি করাই যায়।
প্রস্তাবটি বাস্তাবায়নে সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনিক সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি আহ্বান জানান। বর্তমান ‘হানাহানির’ রাজনৈতিক পরিবেশে সরকারের নির্বাচন দেওয়ার কোনো বাধাবাধ্যকতা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে রাজশাহী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের প্রকাশ্য জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, সেটির নিন্দা জ্ঞাপনের ভাষা আমাদের জানা নেই। তাদের এই হুমকির বক্তব্য শুধু জেলা পর্যায়ের একজন নেতার বক্তব্য নয়, এটি গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। সেটির মধ্য দিয়ে তাদের নীলনকশা প্রণয়ন ও সেটির কার্যক্রম শুরু করারই একটি ইঙ্গিত। আজকের এই সমাবেশ থেকে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। যে ব্যক্তিটি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ভাষায় যেভাবে হত্যার হুমকি দিয়েছেন সেটি একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য একটা বিষয়।
প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক। কাজেই তাকে হত্যা করে এদেশকে আবার পেছনে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা যারা করছে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, যে ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়েছেন, এটা শুধুমাত্র তার একক কথা নয়। একটা রাজনৈতিক দলের ভাষা হলো এটি। সুতরাং এই রাজনৈতিক দলটাকে নিয়েও চিন্তা করতে হবে। যে রাজনৈতিক দলটা ক্রমাগতভাবে হত্যা-নৈরাজ্যের কথা বলছেন সে রাজনৈতিক দলটাকে নিয়েও সরকারকে ভাবতে হবে, জনগণকে ভাবতে হবে। এমন একটা দলের রাজনীতি করার সুযোগ আছে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে বলে আমি মনে করি।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অহিদুজ্জামান চান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছিত, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস ছামাদ, ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার, শিক্ষক সমিতির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী প্রমুখ।