বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম সব চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দ্রুত সময়ে শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ দাবি জানান।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে সারজিস বলেন, পিএসসিসহ অন্যান্য সব চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা অতিদ্রুত সময়ে কার্যকর করতে হবে।
তিনি বলেন, একটা চাকরি মানে একটা পরিবারের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পথচলা।
এর আগে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায়’ প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা ঐক্য বিনষ্ট করে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে পারে। এ জন্য রাজনৈতিক আদর্শ একপাশে রেখে যে কোনো মূল্যে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এ অভ্যুত্থান একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ফসল না। সম্মিলিত আন্দোলনের ফসল হিসেবে আনা এ বিজয়ের স্পিরিট ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিভাজন সৃষ্টি করলে সব স্পিরিট ধুলোয় মিশে যাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আমরা কোনো অথরিটি না, আমরা একটা প্রেসার গ্রুপ। এই প্রেসার গ্রুপটি যদি কোনো কাজ করতে চায় অবশ্যই আইনগত প্রক্রিয়ায় করতে হবে। আমরা যেন আবারও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো কিছু হতে বাধ্য না করে আমরা যেন আইনগত প্রক্রিয়াটি বেছে নেই তাহলেই দেশ স্থিতিশীলতার দিকে যাবে’।
তিনি বলেন, দেশের সিস্টেমের ভেতরে যে ক্যানসার তৈরি হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব তা নির্মূল করে জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি জনগণের নির্বাচিত সরকারে যেতে হবে। এ জন্য ধৈর্য ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে এবং রাজনৈতিক আদর্শ দলাদলি এবং মুখোমুখি হওয়ার ট্র্যাডিশন থেকে বিরত থেকে কিছু সময়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সারজিস বলেন, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে থানায়, কোর্টে চক্কর ঘুরিয়েছে। অন্যায়ভাবে চাঁদাবাজি করেছে এবং সিন্ডিকেটের বোঝা চাপিয়েছে। এ জন্য ১৬ বছর পর সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই ফ্যাসিস্টের পতন ঘটিয়েছে। এখন আমরা ওই একই কাজ করলে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের যে চেতনা তা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ১৬ বছর ধরে নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়ন দেখে ছাত্রজনতা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে সুতরাং ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ফ্যাসিস্টের মতো কাজ থেকে বিরত থাকুন, তা না হলে আজ না হোক ১০ বছর পরে হলেও শেখ হাসিনার মতো অবস্থা হবে।
উত্তরাঞ্চল বৈষম্যের শিকার হয়েছে জানিয়ে সারজিস আরও বলেন, বাংলাদেশের এ গ্রেডের কিছু জেলা ও সিটি করপোরেশন প্রতি বছর যে বাজেট পায় পুরো রংপুর বিভাগ গত ষোল বছরে সে বাজেট পায়নি। রংপুরে এখনও একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখানে ভালো একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে এখানকার রোগীদের ঢাকায় যেতে হয়। বিভাগের যে দু-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের তুলনায় সিকি-কড়িও না। রংপুরে একটি প্রথম সারির ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিও জানান তিনি।