নীতিমালার ফাঁকফোকরে অবসরে গিয়েও অধ্যক্ষ, নীরব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় - দৈনিকশিক্ষা

নীতিমালার ফাঁকফোকরে অবসরে গিয়েও অধ্যক্ষ, নীরব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

‘বয়স ৬০ বছর পেরোলেই অধ্যক্ষ পদ থেকে সরে যেতে হবে। অর্থাৎ অবসরে চলে যেতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সংক্রান্ত বিধিমালায় পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অধ্যক্ষকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ারও সুযোগ নেই’। কিন্তু বয়স ৬০ বছর পার হলেও অধ্যক্ষ পদে বহাল রয়েছেন এমন কলেজের সংখ্যা অন্তত অর্ধশত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এক্ষেত্রে নীরব। চোখের সামনে ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

কীভাবে অবসরে গিয়ে অধ্যক্ষ থাকা সম্ভব? এক্ষেত্রে নীতিমালার ফাঁকফোকর খুঁজে অনৈতিকতার আশ্রয় নিতে হবে। তবেই সম্ভব। বুধবার (৩ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ৬০ বছর পর অধ্যক্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও বিধিমালায় সাধারণ শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার পরও পাঁচ বছর পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সংক্রান্ত বিধিমালায় বলা আছে, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত কলেজের কোনো শিক্ষকের বয়স যেদিন ৬০ বছর পূর্ণ হবে, সেদিন থেকেই তিনি কোনোরূপ সেশন বেনিফিট ছাড়াই অবসর গ্রহণ করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, একজন শিক্ষকের বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করলেও গভর্নিং বডি কলেজের পাঠদানের স্বার্থে তার চাকরির মেয়াদ ৬৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারেন।’

এই ধারারই সুযোগ নিচ্ছেন গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষ। এই ধারার সুযোগ নিয়ে অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষকে কলেজের সাধারণ শিক্ষক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। এরপর ঐ শিক্ষককে (অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয় গভর্নিং বডি। এক্ষেত্রে অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়া হয়। কারণ অধ্যক্ষরা ক্লাস নেন না। আর পাঠদানের স্বার্থে তাকে শিক্ষক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় না গভর্নিং বডি। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় অধ্যক্ষ হিসেবে বসানোর জন্য। আর নীতিমালাও অমান্য হয় এই কারণে যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর তিনি আর শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ক্লাস নেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যখন কেউ নিয়োগ পান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি ঐ কলেজের নিয়মিত শিক্ষক নন। তাহলে তাকে কি কলেজের বিভাগীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ আছে? এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা বলেন, সুযোগ নেই। তবে কিছু কিছু কলেজে এভাবেই হচ্ছে। বিষয়টি আমরা একটা নীতিমালার মধ্যে আনব।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের মেয়াদ চুক্তিভিত্তিক বাড়ানোর জন্য আবেদন আসে। যেখানে প্রয়োজন আমরা শুধু সেখানেই অনুমোদন দিচ্ছি। একসময়ে ঐ অধ্যক্ষকে সেই কলেজে কাজ করার একটা অনুমোদন দেই। তারা কী ক্লাস নেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ক্লাস নেওয়ার জন্য বলে দিচ্ছি। তিনি অধ্যক্ষ অথচ তারা ঐ সাবজেস্ট এফিলিয়েশনই নেই। তাহলে তাকে নিয়োগ দিয়ে লাভ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। 

আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় ৬০ বছর পর অধ্যক্ষ হবার সুযোগ কম। দুই-এক জায়গায় করেছে ব্যতিক্রমভাবে। মন্ত্রণালয়ের কারণেই আমরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান বাতিল করেছি। এখন মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তাদের বিধান পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আমরা আমাদের আগের নিয়মে রয়ে গেছি। মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অভিন্ন হলে মানুষের ভোগান্তি কম হয়।

শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবার পর তারা পাঠদান করেন না? এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নির্ভর করে গভর্নিং বডির ওপর। গভর্নিং বডি যদি মিথ্যা স্টেটমেন্ট দিয়ে নেয় আমাদের কী করার আছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ নিজের এলাকার কলেজগুলোতে নীতিমালা না মেনে অবসরপ্রাপ্তদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস করছে না। আর এই সুযোগ নিয়ে অন্যান্য কলেজগুলোতেও অবসরপ্রাপ্তদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আদেশে বলা হয়, কলেজে অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে/অধ্যক্ষের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উপাধ্যক্ষ/জ্যেষ্ঠতম পাঁচ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে যে কোনো একজনকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে এবং পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের এক বছরের মধ্যে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সই করা কাগজপত্র ও কার্যবিবরণী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃত অথবা গৃহীত হবে না। যদিও এই বিবৃতি কেবলই কাগজেকলমে, যার কোনো বাস্তবায়ন নেই।

রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অফিস চলবে ৯টা-৩টা - dainik shiksha রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অফিস চলবে ৯টা-৩টা দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত শিগগিরই - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত শিগগিরই মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কাল - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কাল তিন সমন্বয়ক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন বলে ডেকে নেয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী - dainik shiksha তিন সমন্বয়ক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন বলে ডেকে নেয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028841495513916