বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ আবেদন শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। ইতোমধ্যে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস এবং দেশগুলোকে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ৬ জুন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সভায় দেশের বেসরকারি মেডিক্যালে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে জিপিএ শর্তে ছাড় দিয়ে ৩.৫০ করা হয়েছিল। ওই সভায় আরও সিদ্ধান্ত জানানো হয়, এবারও দেশের বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হতে পারবেন পাস করা সব শিক্ষার্থী। যদিও এবারের বেসরকারি মেডিক্যাল ভর্তিতে শুরুতে জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৪.০০ রাখা এবং বিদ্যমান আসনের পাঁচ গুণ শিক্ষার্থী ভর্তির কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। তখন এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর এবার ভর্তির শেষ মুহুর্তে এসে এসব সিদ্ধান্ত থেকে সরেই আসতে হলো দেশের চিকিৎসা শিক্ষার তদারক সংস্থাগুলোকে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি পুনরায় ঘোষণা করেছে। ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য বেসরকারি (বেসরকারি) মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ বা ডেন্টাল ইউনিটে তাদের বিদ্যমান আসনের ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, আগ্রহী প্রার্থীদের ১৫ জুন ২০২৩ থেকে একটি অনলাইন আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দিতে পারবেন আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এরপর আর কোনো আবেদন বিবেচনা করা হবে না বলেও জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। এছাড়াও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন করলেই হবে; ভর্তির জন্য তাদের আবেদনের কোনো হার্ড কপি বিদেশে বাংলাদেশের বিদেশী মিশনে জমা দিতে হবে না।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের মেডিক্যাল বা ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস অথবা বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৩’ এর অনুচ্ছেদ ২.৪ এবং ৪.১ সংশোধন করেছিল। সংশোধিত ভর্তি নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৪.১ অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভর্তি (লিখিত) পরীক্ষায় কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় মেধা তালিকা (বিশেষ কোটা যদি থাকে উল্লেখসহ) প্রকাশ করা হইবে। তবে ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বর এর নীচে প্রাপ্ত প্রার্থীরা কোনোভাবেই ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবেন না বলেও জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এছাড়াও মেডিক্যাল বা ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস অথবা বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০১৩’ এর অনুচ্ছেদ ২.৪ এ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে (Biology) জিপিএ ৩.৫০ পয়েন্ট প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাইবেন মর্মে উল্লেখপূর্বক ধারাটি সংশোধন করতে হইবে। ফলে এবারও দেশের বেসরকারি মেডিক্যালের বিদেশি শিক্ষার্থী হারানোর শঙ্কা থাকলেও সে শঙ্কা কাটল। এর আগে জিপিএ শর্তের কারণে বাদ পড়তে যাওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি অথবা তাদের অর্থ ফেরত দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলকে চিঠি দেয় ভারতীয় দূতাবাস।
এবারের ভর্তি নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৪.১ অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভর্তি (লিখিত) পরীক্ষায় কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদিত মোট আসন সংখ্যার সাথে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদিত আসন সংখ্যার ৫ গুণ শিক্ষার্থীকে নিয়ে জাতীয় মেধা তালিকা (বিশেষ কোটা যদি থাকে) উল্লেখসহ প্রকাশ করা হইবে। তবে ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বর এর নীচে প্রাপ্ত প্রার্থীরা কোনোভাবেই ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হইবে না—এতে পাশ করেও মেডিক্যাল ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় ছিলেন পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। নতুন সিদ্ধান্তে ভর্তির সুযোগ পাবেন এসব শিক্ষার্থী।
এছাড়াও একই নীতিমালায় বলা হয়েছিল, প্রার্থীকে এসএসসি বা ‘ও’ লেভেল বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হইতে হইবে এবং এইচএসসি বা ‘এ’ লেভেল বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগসহ অবশ্যই পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট থাকিতে। এ সিদ্ধান্তে ফলে দেশের বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তি নিশ্চায়ন করলেও বাদ পড়েন প্রায় ২০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশের বেসরকারি মেডিক্যালে বিদ্যমান ৬২০৭ টি আসনের বিপরীতে আবেদনকারীদের প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মেসেজ পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। দেশের প্রচলিত ভর্তি কাঠামোয় বর্তমানে ৪৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। সে হিসেবে বিদ্যমান আসনের বিপরীতে এখানো প্রায় ৫ শতাধিক আসন ফাকা রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য।