দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নাট্যকার নুরুল মোমেন এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ নভেম্বর ফরিদপুর (তৎকালীন যশোর) জেলার আলফাডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নুরুল আরেফিন ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক।
নুরুল মোমেন ঢাকা মুসলিম হাই স্কুল থেকে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক, ঢাকা ইন্টারমেডিয়েট কলেজ থেকে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে আইএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে বিএ পাস করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন।
নুরুল মোমেনের প্রথম নাটক রূপান্তর ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বেতার-এ প্রচারিত হয়। তিনি নিজে নাটকটি পরিচালনা করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে নাটকটি গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয়। তার নেমেসিস নাটক ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। নাটকটি পঞ্চাশ-দশকের মন্বন্তরের পটভূমিতে রচিত। এর রচনাশৈলী ও পরিকল্পনা অভিনব। একটি মাত্র চরিত্রের মাধ্যমে দীর্ঘ সংলাপের ভিতর দিয়ে পুরো নাট্যকাহিনী বিবৃত হয়েছে যার মধ্যে একটি পরিপূর্ণ ছবি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। ফলে নাটকটি নাট্যামোদীদের কাছে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয় এবং এ নাটকের মাধ্যমে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে অধিষ্ঠিত হন।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে নুরুল মোমেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে যোগ দেন । ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তার বহুরূপা নামে একটি রম্যরচনা প্রকাশিত হয়। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি ইংল্যান্ড যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডন অবস্থানকালে তিনি বিবিসি-র বাংলা অনুষ্ঠানে ‘কাকলী’ নামে শিশুদের আসর পরিচালনা করেন। এ সময় লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসে তিনি এক বছর শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট ছাড়াও তিনি আইন বিভাগের ডিন, প্রক্টর ও ট্রেজারার ছিলেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সমকালীন সমাজের অসঙ্গতি ও দ্বন্দ্বসমূহ তিনি ব্যঙ্গরসের মাধ্যমে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরেন। নাট্যশিল্পী হিসেবে এটা তার বড় কৃতিত্ব। তার অন্যান্য বিখ্যাত নাটক যদি এমন হতো, নয়া খান্দান, আলোছায়া, আইনের অন্তরালে, শতকরা আশি, রূপলেখা ও যেমন ইচ্ছা তেমন।
সাহিত্যকর্মে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি কলকাতায় সংবর্ধনা, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়-এর ইন্টারন্যাশনাল প্লেয়ার্স সংগঠনের সংবর্ধনা, ব্রিটেনের থিয়েটার ব্যক্তিত্বগণ কর্তৃক সংবর্ধনা, বাংলাদেশের থিয়েটার নাট্যদল কর্তৃক সংবর্ধনা ও একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে নুরুল মোমেন মৃত্যুবরণ করেন।