পদ্মা সেতুর রেলপথের শেষ স্লিপার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন আজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রেল নেটওয়ার্ক ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল—এই চারটি জেলা অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে সংযোজিত হবে। গত রবিবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো, শরিফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেতুতে যানবাহন চালু রেখেই নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। এখন তা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রকল্পের মোট ১৬৯ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের স্টেশন নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর খবরে পদ্মা সেতুর দুই পারে আনন্দের জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিন বিকাল হলেই দুই পারের মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যেমন সেতুর দুই পারের মানুষের উত্সাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে, তেমনি পদ্মা সেতুর রেলপথ চালুর বিষয়েও হাজার হাজার মানুষের মধ্যে উত্সবের আনন্দ বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে আবার জমবে মাওয়া ও ভাঙ্গা স্টেশন।
সেকশনভিত্তিক ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতুতে শতভাগ, মাওয়া-ভাঙ্গা অগ্রাধিকার অংশের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৮৮ দশমিক ৫০ ভাগ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ। ভাঙ্গা-যশোর সেকশনে নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৬২ ভাগ। ঢাকা-যশোর সেকশনে নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৭০ দশমিক ৫০ ভাগ। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি পর্যন্ত সার্বিক ক্রমপুঞ্জিত ভৌত অগ্রগতি শতকরা ৭০ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৬৭ দশমিক ২৫ ভাগ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনসট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘আগামী বছর প্রকল্পটি জুন-মাসের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। আমরা এরই মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত শতভাগ কাজ শেষ করেছি। রেলসংযোগ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘৪ এপ্রিল রেলমন্ত্রী আমাদের সময় দিয়েছেন বলে সেদিন আমরা গ্যাংকার দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার রেলপথ পরীক্ষা করে দেখব। এ পথে ডিজাইন-স্পিড ১২০ কিলোমিটার থাকলেও ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে পরীক্ষামূলক টেস্ট চালানো হবে।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় রেল লিংক প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)। এই প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর।