শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশের প্রায় সব জায়গায় পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। কর্মবিরতীর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোড়ে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এতে অংশ নিয়েছেন সাধারণ মানুষও।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে দেশের প্রায় সব শহরের বিভিন্ন স্থানে এ কর্মসূচি শুরু হয়। যা এখনও চলছে। এছাড়াও নগরের বিভিন্ন স্থাপনার দেয়াল লিখনও মুছে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকাল থেকে রাজধানীর প্রায় সকল ব্যস্ততম সিগন্যাল ও সড়কে মুখে বাঁশি নিয়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। ঢাকায় গণভবনের সামনে, শিয়া মসজিদ মোড়ে, টিএসসি এলাকা, ইসিবি, ধানমন্ডি, কলাবাগান, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, মিরপুর ১০ নম্বর, মিরপুর ১২ ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
সিগন্যালগুলোতে শিক্ষার্থীদের পালা করে দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে। কয়েক জায়গায় তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যও রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কিছু সদস্যদেরও বিভিন্ন সিগন্যালে দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে।
ঢাকার বাহিরেও দেখা গেছে একই দৃশ্য। নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, নরসিংদী, জামালপুর, নড়াইল, ফরিদপুর, পাবনা, গাইবান্ধা, রাজবাড়ি, নাটোর, ঝিনাইদহ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটেও একই কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
নোয়াখালীতে সকাল থেকেই জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী বাজারের দীর্ঘদিনের জানজট নিরসনে কাজ করে শিক্ষার্থীরা। একইসাথে পৌরসভার রাস্তা ও ফুটপাতের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে তারা। এদিকে শিক্ষার্থীদের এ কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সাধারণ নাগরিকরা।
কুড়িগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সড়কে ভাংচুরের ময়লা আবর্জনা পরিচ্ছন্নতায় কাজ করতে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনে স্বাধীনতা যেমন এনেছেন এখন তা ধরে রাখার কাজটিও তারা করবেন। এজন্য জনসাধারণের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
নরসিংদীর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও বিভিন্ন সড়কে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্র-জনতা, আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর সদস্যরা লাঠি হাতে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন। এসময় সাধারণ মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সচেতন করছেন তারা। কাউকেই মহাসড়ক হেটে পার হতে দিচ্ছেন না তারা। সাধারণ মানুষের চলাচল স্বাভাবিক করতেই এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন বলে জানান তারা।
জামালপুরেও রাস্তা-ফুটপাত পরিষ্কার ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সকাল থেকে শহরের বকুলতলা মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় পরিস্কার করার মধ্য দিয়ে শহরের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে তারা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার কার্যালয় হিসেবে ঘোষনা করেছেন।
নড়াইলেও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এ কার্যক্রম শুরু করে। এসময়, নড়াইল চৌরাস্তা, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিনের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের আবর্জনা পরিষ্কার করে তারা।
ফরিদপুরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড় থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়ে মুজিব সড়ক হয়ে সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে পৌছে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায় তারা। এ সময় শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্বায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাদের।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তাঘাটে জমে থাকা ময়লা আর্বজনা পরিষ্কার করেছে শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা নগরীর চাষাঢ়া, জামতলাসহ কয়েকটি পাড়া মহল্লার রাস্তায় জমে থাকা ময়লা আর্বজনা পরিষ্কার করেন। এসময় শিক্ষার্থীর রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে ময়লা আর্বজনা গাভেজ ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেন।
দেশের আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিভিন্ন জেলার মতো পাবনা শহরের বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে। এদিন সকালে শহরের আব্দুল হামিদ রোড়ে পৌর ট্রাফিকের সাথে যানজট নিরসনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
গাইবান্ধা জেলা শহরের বাস টার্মিনাল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও ডিবি রোডে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করেছে শিক্ষার্থীরা। একইভাবে রাজবাড়িতেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীরা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এ সময়, শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ঝুড়ি, ঝাটা, বেলচা, বস্তাসহ নানা জিনিসপত্র নিয়ে এ কর্মসূচিতে হাজির হয়। সকালে সড়কের একপাশ দিয়ে শুরু করে শহরের রেলগেইট এলাকাপর্যন্ত গিয়ে আবার বড়পুলে এসে শেষ হয় তাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি।
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইটপাটকেল, আগুনে ভস্মীভূত বিভিন্ন কাঠামো থেকে আবর্জনা অপসারণ করছে মুন্সিগঞ্জের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সড়কে পড়ে থাকা গাড়ির ট্রায়ার, সাইনবোর্ড ও ব্যানার সরিয়ে নিয়ে এবং ঝাড়ু ও বেলচা দিয়ে রাস্তার পাশের ময়লা, ফুটপাতে পড়ে থাকা আবর্জনাও পরিষ্কার করা হচ্ছে।
কালো ব্যাগে ক্ষতিকর উপাদান ও সাদা ব্যাগে ময়লা-আবর্জনার ভরে পৌরসভার ময়লার স্তুপে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। উৎসব আনন্দে এ কাজে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন বয়সী সাধারন মানুষরাও।
এছাড়াও মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায় সামনে থেকে সুপার মার্কেটে, কালীমন্দিরের সড়ক থেকে ডিসি পার্ক ও সুপার মার্কেট থেকে পিটি আই স্কুল পর্যন্ত সড়ক থেকে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা সকলের উদ্দেশে বলেন, কোনো প্রকার জ্বালাও পোড়াও আমাদের কাম্য নয়। যারা সরকারি সম্পদ নষ্ট করেছে তাদের সনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। সবাই মিলে সুন্দর মুন্সিগঞ্জ গড়ে তোলা হবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে একইভাবে শহর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। কিছু কিছু জায়গায় এতে সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করেছেন।