দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে সারাদেশে একযোগে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হবে না। পরীক্ষা হবে এক বা একাধিক বিভাগ অনুযায়ী। গতকাল বুধবার শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব) নেতাদের সঙ্গে সচিবালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ এ তথ্য জানান।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আনার। এর অন্যতম হলো ক্লাস্টারভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া। অর্থাৎ একটি বিভাগ অথবা একাধিক বিভাগ নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হবে। এ পরির্বতনের ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। আগে সারাদেশে একযোগে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হতো।
কেন নিয়োগ কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি ৪) প্রায় ১ লাখ শিক্ষক নিয়োগের কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জুনে। এরই মধ্যে চলতি মাসে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন নিয়োগের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়োগটি শেষ করতে ২ বছর সময় লেগেছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে গিয়েছিল। এতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ভবিষ্যতে যেন তা না হয় এজন্য আমরা এখন থেকেই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছি। এখন আমরা উপজেলাভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, এতে আইনগত কোনো জটিলতা নেই।
আগামী বছরই প্রাথমিকে নতুন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। আশা করছি আগামী বছরই প্রাথমিকে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া সম্ভব হবে। চলতি বছরের মতো ভবিষ্যতেও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার ইঙ্গিত দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব। বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে না এ কথা বলা হয়নি। পরীক্ষার সংখ্যা কমাতে বলা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রাক-প্রাথমিকে একদমই পরীক্ষা নেয়া হবে না। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে।
পিইডিপি-৪ প্রকল্পে দাতা সংস্থার কাছে কাম্য দক্ষতা মূল্যায়নের বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার আছে। তাই দক্ষতা মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা নিতেই হবে।ভবিষ্যতেও বৃত্তি পরীক্ষা নেয়া চলমান থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনকার প্রেক্ষাপটে এটি (বৃত্তি পরীক্ষা) নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন হবে এরপর তা মূল্যায়ন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটি চলমান থাকবে কিনা বা এতে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা তা অংশীজনদের পরামর্শ অনুযায়ীই নেয়া হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বিশিষ্টজনদের আহ্বানের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করে চলতি বছর বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারা পৃথিবীতে লিখিত পরীক্ষা কোথাও তুলে দেয়া হয়নি। আমরা পরীক্ষা এমনভাবে নেয়ার চেষ্টা করছি যেন কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক এ পরীক্ষার কারণে বাড়তি চাপ অনুভব না করে। মূল বই থেকেই পরীক্ষার প্রশ্ন করা হবে। বৃত্তি পরীক্ষা কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না, কারণ বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। কেউ চাইলে এখানে অংশ না-ও নিতে পারে। বৃত্তি পরীক্ষা নেয়া নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক না। বরং এটি সহায়ক।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক বৃত্তি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য একটি প্রণোদনা। এতে সরকারের একটি বাজেটও রয়েছে। পরীক্ষা না নিলে এই বাজেটটি অন্য খাতে সমন্বয় করতে হবে। বৃত্তি প্রাপ্তি একজন শিক্ষার্থীর পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। আর সবাইকে তো বৃত্তি দেয়া সম্ভব না। তাই বৃত্তি দেয়ার মাপকাঠি নির্ধারণে একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আমাদের অনুসরণ করতেই হবে। এজন্য আমাদের পরীক্ষা নিতেই হচ্ছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে অনলাইনে শিক্ষক বদলির কার্যক্রম আবার শুরু হওয়ার কথাও জানান ফরিদ আহাম্মদ। বলেন, এবারই প্রথম অনলাইনে শিক্ষক বদলির আবেদন নেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার আবেদন পড়ে। এর মধ্যে ২৩ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আবার শুরু হওয়া অনলাইনে বদলি আবেদন চলবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২৭ তারিখেই বদলি সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে।