সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাতিয়া স্কুল ও কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিন নিজের বিরুদ্ধে স্কুলের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় তদন্তে জবাব দেয়ার জন্য পরীক্ষা ও স্কুল বন্ধ রেখে জেলা শিক্ষা অফিসে যান সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিন। তাই গত রোববার ওই প্রতিষ্ঠানের দরজা খোলা হয়নি।
স্কুলটি দিরাই উপজেলা কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়, স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০০।
অর্থ আত্মসাতের মামলার তদন্তের জন্য স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা ও স্কুল বন্ধ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্কুলের দাতা সদস্য, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানান, হাতিয়া স্কুল ও কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ নেই। বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষক গেল বছরের ২১ জুন নিয়োগ পান। এরপর একটি জালিয়াতির ঘটনায় চলতি বছর মার্চ মাসে এক মাস পাঁচ দিন কারাভোগ করেন। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে স্কুলের পুরনো ভবন বিক্রি, শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও বেতনের ৭ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় স্কুলের দাতা সদস্য শাহরিয়া আহমদ গত ২১ অক্টোবর দিরাই উপজেলার আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এই মামলার তদন্তে উপস্থিত থাকার জন্য গতকাল স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা ও স্কুল বন্ধ রেখে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যান সহকারী প্রধান শিক্ষক। কিন্তু স্কুল ছুটির কোনো নোটিশ না দেয়ায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য স্কুলে এসে ভবন তালাবদ্ধ দেখে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
স্কুলের দাতা সদস্য ও মামলার বাদী শাহরিয়া আহমদ বলেন, স্কুলের টাকা আত্মসাৎ করে স্কুলটি ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন সহকারী প্রাধান শিক্ষক। এ জন্য আদালতে মামলা করছি। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমাকে ফোনে জানানো হয়েছিল, আজকে (রবিবার) তদন্ত হবে। আমি সিলেটে অবস্থান করায় সময় চেয়েছি। কিন্তু সহকারী প্রধান শিক্ষক স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা ও স্কুল বন্ধ রেখে শিক্ষা অফিসে গিয়েছেন। এলাকার লোকজন বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।
স্কুলের কৃষি শিক্ষার শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক আইনের ধার ধারেন না, উনার মনে চায় তাই করেন। সারাদেশে বার্ষিক পরীক্ষা চললেও গতকাল আমাদের স্কুল বন্ধ ছিল।
হাতিয়া স্কুল ও কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের কাছে স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসে আছেন, কাজ করছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবারও ফোন করলে রিসিভ করেননি।
প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, মামলার তদন্ত কাজের জন্য পরীক্ষা ও স্কুল বন্ধ রেখে সহকারী প্রধান শিক্ষকের জেলা শিক্ষা অফিসে যাওয়ার বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছু বলেননি বা জানাননি। খোঁজখবর নেওয়া হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তদন্তে নিরাপত্তার জন্য সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের অফিসে ডাকা হয়েছিল। সহকারী প্রধান শিক্ষক একাই এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, স্কুল ছুটি দিয়ে এসেছেন। ছুটি না দিয়ে এসে থাকেন তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।