এসএসসি সমমান পরীক্ষায় কুড়িগ্রামের রৌমারীতে একটি কেন্দ্রের এক কক্ষে পরীক্ষার শুরুর ২৫ মিনিট পর পরীক্ষার্থীদের হাতে রচনামূলক প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই কক্ষে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে খাতা কেড়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। রোববার উপজেলার শৌলমারী এম আর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার বিষয়ে পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রসচিবের কাছে ওই কক্ষের পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরীক্ষা শেষে উল্টো পরীক্ষার্থীদের দেড় ঘণ্টা জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক পরীক্ষার্থী। এ কেন্দ্রের চত্বরে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এসো জড়ো হন। সে সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, কক্ষ পরিদর্শক, কেন্দ্র সচিব।পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান।
জানা গেছে, শৌলমারী এম আর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪৬৫জন ছাত্র ও ছাত্রীরা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে প্রথম দিনই ৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। প্রথম দিনে ছিলো বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা। সকাল ১০ টায় শুরু হয় নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষা। সময়ছিল ৩০ মিনিট।
ওই কেন্দ্রের এক নম্বর কক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, খাতা নির্দিষ্ট সময়ে দিলেও রচনামূলক প্রশ্ন ১০ টা ৫৫ মিনিটে দেয়া হয়। এমসিকিউ পরীক্ষার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রচনামূলক প্রশ্নপত্র দেয়ার নিয়ম থাকলেও রহস্যজনক কারণে ২৫ মিনিট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর রচনামূলক প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়।
এ কেন্দ্রের কক্ষ পরিদর্শক ছিলেন মোট ৩২জন শিক্ষক। কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন।
এ কেন্দ্রের ১ নং কক্ষে ৩২ জন ছাত্র ও ছাত্রী পরীক্ষায় অশগ্রহণ করেন। ওই কক্ষে ইদ্রিস আলী ও নবীন উদ্দিন কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। ইদ্রিস আলী দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধর্ম বিষয়ে সহকারী শিক্ষক। অপর নবীন উদ্দিন কুটিরচর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক।
পরীক্ষার্থী ফারজানা আক্তার, মারিয়া জান্নাত, ফারজিনা খাতুন, আরিফা খাতুন, নিপা খাতুনসহ অনেকই দৈনিক শিক্ষাডটকমকে অভিযোগ করে বলেন, নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্রসহ খাতা নির্দিষ্ট সময়ে দিলেও রচনামূলক প্রশ্ন ১০ টা ৫৫ মিনিটে দেয়া হয়। এতে ২৫ মিনিট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর রচনামূলক প্রশ্ন সরবরাহ করেন। ২৫মিনিটে দুইটি প্রশ্নে উত্তর লিখতে পারতাম। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, পরীক্ষার শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ে ৫ মিনিট আগেই খাতা নেয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে পরীক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কেন্দ্রসচিব স্যার ও কক্ষে দায়িত্বরত স্যারদের রচনামূলক প্রশ্ন দেয়ার জন্য একাধিকবার বলেও তারা প্রশ্নপত্র দেননি। উল্টো আমাদের ভয়ভীতি ও জিম্মি করে রাখেন। তাই আমরা তাদের বিচার দাবি করছি।
অভিযোগ ব্যাপারে জানতে চাইলে এক নম্বর কক্ষের পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যথাসময়ে আমি খাতা ও পরীক্ষার রচনামূলক প্রশ্ন দিয়েছি। এখন পরীক্ষার্থীরা হয়তো পাস করতে পারবে না তাই মিথ্যাচার করছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শৌলমারী এমআর স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্র সচিব উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এক নম্বর কক্ষের কোনো পরীক্ষার্থী রচনামূলক প্রশ্ন পায়নি বলে কোনো অভিযোগ দেয়নি। কোনো পরীক্ষার্থী বললে তা মিথ্যা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, প্রশ্নপত্র দিতে ৬ মিনিটের মতো দেরি হয়েছিলো তা সত্য। ২৫ মিনিট পর প্রশ্নপত্র দেয়ার বিষয় পরীক্ষার্থীরা বাড়িয়ে বলছে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) মো. সোহেল উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে ঘটনাস্থলে আমি নিজে গিয়ে সবাইকে শান্ত হওয়ার জন্য বলি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ বি এম সারোয়ার রাব্বি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, অভিযোগকারী পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার শেষে ওই কক্ষে অভিযোগ প্রসঙ্গ জানতে কিছুটা সময় লেগেছিলো। তবে কোনো পরীক্ষার্থীদের ভয়ভীতি ও জিম্মি করা হয়নি। পরে পরীক্ষার্থীদের পরবর্তী বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কক্ষ পরিদর্শক ইদ্রিস আলী ও নবীন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসার জন্য আমার কার্যালয়ে এনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি ২৫ মিনিট না তবে ৫ মিনিটের বিষয় জেনেছি। ওই কেন্দ্রের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।