৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তন হয়েছে রাজনৈতিক পট। পরিবর্তন আসছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়েও। এসব পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের দেয়ালে আঁকা ছবি (গ্রাফিতি)। পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ থেকে বাদ যাচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি। পরিবর্তন আনা হচ্ছে ইতিহাসনির্ভর অনেক বিষয়েও। তবে এখনো পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজ শেষ করে ছাপার জন্য প্রস্তুত করতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা । অবশ্য এনসিটিবির কর্মকর্তারা আশা করছেন, পরিমার্জনের কাজ পুরোপুরি শেষ করে এ মাসের মধ্যেই মুদ্রণকারীদের হাতে পাণ্ডুলিপির সিডি দিতে পারবেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে।
এনসিটিবি সূত্র বলছে, সক্রিয় শিখনপ্রক্রিয়া থাকায় আগামী বছর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেওয়া হলেও সেখানেও কিছু পরিমার্জন হচ্ছে। কিন্তু চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই নতুন শিক্ষাক্রমের পরিবর্তে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই দেওয়া হবে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রমের আলোকে। আর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা।
পুরোনো শিক্ষাক্রমের বই হলেও বিষয়বস্তুতে কিছু পরিবর্তন হবে। পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে ইতিমধ্যে পাঠ্যবই আছে। প্রসঙ্গত, শিক্ষাক্রম ২০১২ সালের হলেও সর্বশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষাক্রমের আলোকে বই দেওয়া হয়েছে। সেগুলোই এখন পরিমার্জন করে ছাপার উপযোগী করা হচ্ছে। এই কাজে ৪১ ব্যক্তি জড়িত।
নতুন শিক্ষাক্রমে বইয়ের সংখ্যা কম ছিল, কিন্তু পুরোনো শিক্ষাক্রমে বই বেশি। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে একেকটি শ্রেণির জন্য ১০টি বিষয় ছিল। পুরোনো শিক্ষাক্রমে বিষয় আরও বেশি। তাই বইয়ের সংখ্যা বেশি। যেমন পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা ২৩ (সব কটি সবার জন্য নয়)।
পাঠ্যবই পরিমার্জনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রাখাল রাহা বলেন, পরিমার্জনের কাজটি শেষ হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, এ মাসের মধ্যেই সব পাণ্ডুলিপির সিডি মুদ্রণকারীদের হাতে দিতে পারবেন।
পুরোনো শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য দুই শ্রেণির জন্য আলাদা বই দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এই শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে বই পড়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব শিক্ষার্থী আগামী বছর দশম শ্রেণিতে উঠে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা বেছে নেবে। তাদের জন্য ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পরিমার্জন করে নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হবে। এ কারণে এবার পাঠ্যবইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানায় এনসিটিবি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, এবার মোট বইয়ের সংখ্যা ৪০ কোটির মতো। বই ছাপার জন্য পাণ্ডুলিপির সিডি শনিবার থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে। তাঁর আশা, পরিকল্পনামতো কাজ হলে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবেন।