পাঠ্যবইয়ে থাকা বিভিন্ন ভুলের দায় দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে সেগুলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, যেখানে যেখানে যা ভুল থাকুক না কেন, সেই ভুলের দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে সেগুলোকে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধন করছি।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যখনই যে ভুল চিহ্নিত হচ্ছে এবং হবে, সঙ্গে সঙ্গে তা সংশোধন করে আমরা সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিচ্ছি এবং আমাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের প্রক্রিয়াকে আরও কত বেশি নির্ভুল করা যায়, সেজন্য আমাদের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে দীপু মনি বলেন, বইপড়া আসলেই খুব জরুরি। পাঠ্য বইয়ে বই পড়ার আনন্দ থাকে না। সারা দেশে আমাদের সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে এই বই পড়ার অভ্যাস, পাঠ্য বইয়ের বাইরের বই পড়ার মাধ্যমে তাদের চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে তোলা, মনকে আলোকিত করার সেই কাজটি যেন আমরা সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে করতে পারি, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা এবং এর মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো।
সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির টিম লিডার ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বলেন, পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি একই গুরুত্ব দিয়ে, একই ভালোবাসা দিয়ে, একই মমতায় অন্যান্য বইয়ের পাঠাভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে। পাঠকে করতে হবে আনন্দের। তবেই আমরা একটি সুন্দর সমাজ ও সোনার বাংলাদেশের সোনার মানুষ পাবো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি)-এর অন্তর্ভুক্ত ‘স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিম’-এর আওতায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি দেশের ৬৪ জেলার ৩০০ উপজেলায় ১৫ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ ছাত্রছাত্রী বই পড়ার সুবিধা পাবে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্ৰ এই কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে।
বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের নিয়ে ৮টি ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩টি বিভাগে (রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা) কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এসকল ওরিয়েন্টশন কর্মশালায় ৩০০ উপজেলার প্রায় ৬০০ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। আজকের ওরিয়েন্টেশন কর্মশালাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।
এই ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায় ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার জেলা শিক্ষা অফিসার, কর্মসূচিভুক্ত ৫৩টি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অংশগ্রহণ করবেন। আশা করা হচ্ছে এই কর্মশালার মাধ্যমে ৫৩টি উপজেলার ২ হাজার ২৯৫টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির বইপড়া কার্যক্রম শুরু হবে। এর ফলে আনুমানিক ৩ লাখ ৯০ হাজার ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী স্কিমের তালিকাভুক্ত বইগুলো নিজেদের সমৃদ্ধ, মানবিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, এসইডিপি’র অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার, এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ, মাউশির স্কিম পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন।