দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলে মানুষের স্বস্তি হতো উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি; এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্যান্য দেশেও আছে। আমেরিকারও মূল্যস্ফীতি একটা বড় সমস্যা। তবে আমাদের উৎপাদন যথেষ্ট হচ্ছে। উৎপাদনের কোনো অভাব নেই। এবারো আমাদের বোরো ধান খুব ভালো হয়েছে। অলরেডি হাওড়ে ধান কাটা প্রায় শেষ। যেগুলো বাকি আছে সেগুলোও কাটা হবে। সেভাবেই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি- দেশটা যেন সচল থাকে, এগিয়ে যেতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জোটের প্রধান শেখ হাসিনা নিজেই। অংশ নেন জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা রাশেদ খান মেনন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়ুয়া, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি, ফজলে হোসেন বাদশা, শিরিন আখতার, এসকে শিকদার, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর জোটের নেতাদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়।
রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দেশেই রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। আমাদেরও কমছে। কোভিডের সময় আমদানি-রপ্তানি, যাতায়াত সব বন্ধ ছিল। টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ফলে রিজার্ভ বেড়েছিল। সব কিছু চালুর পর খরচ হলো, ফলে রিজার্ভের ওপর কিছুটা চাপ পড়েছে। তবে রিজার্ভ কমলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই; আপৎকালীন খাদ্য মজুত আছে। দরকার হলে আমদানিও করা যাবে। তিনি বলেন, এত বেশি আলোচনার কারণে আজ প্রায় সবাই রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন। তবে এই সতর্কতা দেশের জন্য ভালো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমানো... এখানেও অনেক খেলা হয়। দেখলাম আলু যেখানে রাখা হয়, সেখানেও ডিম নিয়ে রাখা হচ্ছে। অথচ আলুর কোল্ড স্টোরেজে ডিম রাখার কথা না। এমন অনেক ঘটনা এখন ঘটছে।
স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, মানুষের কল্যাণ হয়, যা গত ১৫ বছরে প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজ- এরা যদি বিদেশের মাটিতে বসে... আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই সুযোগ নিয়ে লন্ডন থেকে প্রতিদিনই বসে নানারকম হুমকি-ধমকি দেয়। যতক্ষণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে, সেগুলো আমি কেয়ার করি না। তারপরও জ¦ালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ যেন না করতে পারে। এগুলো যারা করবে, তাদের কোনো ছাড় নেই। যতই মুরুব্বি ধরুক আর যাই ধরুক, এদের আমরা ছাড়ব না, পরিষ্কার কথা। মানুষের ক্ষতি যারা করবে ব্যবস্থা নেয়া অব্যাহত থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারকে নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চক্রান্ত এখনো আছে। পূর্ব তিমুরের মতো বাংলাদেশের একটা অংশ নিয়ে, তারপরে চিটাগাং, মিয়ানমার মিলে একটা খ্রিস্টান স্টেট বানাবে। বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাঁটি করবে। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশের নির্বাচনই হতে দেবে না। তবে দেবে, আর আমারও ক্ষমতায় আসতে অসুবিধা হবে না; যদি আমি বাংলাদেশে কারো এয়ারবেজ করতে দেই, ঘাঁটি করতে দেই, তাহলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। কোনো এক সাদা চামড়ারই প্রস্তাব। আমি স্পষ্ট জবাব দিয়েছি, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারো হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমার ক্ষমতার দরকার নাই। জনগণ যদি চায় ক্ষমতায় আসব নইলে আসব না। এই কথাগুলো সবার জানা উচিত। আমার যেটা যুদ্ধ সেটা ঘরে-বাইরে সব জায়গায়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আমরা শোক দিবস ঘোষণা দিয়েছি। গাজায় হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কাজেই যেখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে আমরা সব সময় নির্যাতিত মানুষের পাশে আছি। যেটা জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন। এখানে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- এটা আমরা ধরে রেখেছি। এর ব্যত্যয় হচ্ছে না। রাখা যে যায় সেটাও আমরা প্রমাণ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর এখানে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আর এই জায়গায় কোনো বিতর্ক নেই, এখানে কারো কোনো দ্ব›দ্ব নেই। এই জায়গার ওপর অনেকের নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না। এটা আমার একটা অপরাধ। তিনি বলেন, এখানে এয়ারবেজ করে কার ওপর হামলা করবে। যদিও একটা দেশকে দেখানো হয় কিন্তু সেটা তো না। আমিতো জানি আরো কোথায় যাবে। যে কারণে আমাদের সব সময় কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, হবে আমি জানি। কিন্তু আমি ওটা পাত্তা দেই না সোজা কথা। আমার শক্তিই দেশের মানুষ, যদি ঠিক থাকে...। আর দেশটা যে উন্নত হচ্ছে এটা অনেকের পছন্দ না।
শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে সব থেকে বড় সমস্যা হবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্টের মাধ্যমে মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করা। সেটাকে নজরদারিতে আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। শুধু আমাদের দেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও এখন এই ব্যাপারে খুব চিন্তিত। সেটাকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, প্রতিটি দেশ এ ব্যাপারে সচেতন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে না আগালে আমরা দেশটাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারব না। এখানে যে বাঁধাগুলো আসে... মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের বিরুদ্ধে ছিল, এখনো তারা একটুও বদলায়নি, এটি হলো বাস্তবতা। সেগুলো অতিক্রম করেই তো আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
সমবায়ের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ধান-মাছ চাষ হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো অনাবাদি জমি থাকবে না। সবার জমি আবাদ করতে হবে। টুঙ্গিপাড়ায় অনাবাদি জমিতে চাষ শুরু করেছি। গতবার পেয়েছিলাম ২০০ মণ ধান। এবার সেই জমিতে আমরা ৩৯৪ মণ ধান পেয়েছি। যেখানে পানি ছিল সেখানে মাছ চাষ করেছি। সবার ভাগ দিয়ে প্রায় ১১০ মণের মতো মাছ পাওয়া গেছে। সবার ভাগ দিয়েও আমি লাভবান হয়েছি। আর আমার বাড়ি আমার খামারে নয় বিঘা জমি দিয়েছি, সেখানে সমবায় সমিতির নামে যাতে চাষ হয়। এভাবে সব অনাবাদি জমি আমরা চাষের আওতায় নিয়ে এলে আমাদের খাবারের কোনো অভাব হবে না। বরং খাবার আমরা বাইরে পাঠাতে পারি। সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে এখন শরীয়তপুরের সবজি। ফুল উৎপাদন হচ্ছে, সেটাও রপ্তানি হচ্ছে। ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।