পাহাড়ে প্রাথমিক শিক্ষায় সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ - দৈনিকশিক্ষা

পাহাড়ে প্রাথমিক শিক্ষায় সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

তিন পার্বত্য জেলায় ১৭১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও শতাধিক বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত ৪৮০০টি ‘পাড়াকেন্দ্র’ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি ভিন্ন ভাষাভাষী আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এ এলাকার শিশুদের অতীতে মূলত শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু হতো সাধারণত বৌদ্ধ মন্দিরে, যেগুলোকে কেয়াং বা কিয়ং বলা হতো। ভিক্ষু ও শ্রমণরাই শিক্ষাদানের কাজগুলো করতেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীকেও যথাযথভাবে শিক্ষা দেয়া হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে কেয়াং-এর কলেবর। এগুলো হয়ে ওঠে আবাসিক শিক্ষাকেন্দ্র, যেখানে দূরদূরান্ত থেকে এসে শিশুরা ভর্তি হতে থাকে। শিক্ষাকেন্দ্রগুলো ছিল অবৈতনিক। থাকা, খাবার, পোশাক সবই ছিল বিনামূল্যে। এলাকার সচ্ছল জনগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় এগুলো চলত। শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল মৌখিক ও ব্যবহারিক। শিক্ষা গ্রহণের অংশ হিসেবে প্রাত্যহিক কাজকর্মে কায়িক শ্রমও দিতে হতো। শনিবার (১০ অক্টোবর) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন আশীষ কুমার আচার্য্য।

নিবন্ধে আরো জানা যায়, দুর্গম জনপদ, ভৌগোলিক অবস্থা, যোগাযোগের অব্যবস্থা, ভিন্ন সাংস্কৃতিক সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক, প্রতিকূল জীবনধারায় প্রবাহিত পার্বত্য জনজীবনে প্রত্যাশিত প্রাথমিক শিক্ষা চ্যালেঞ্জও বটে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চায়ন এবং প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে নেয়া বেশ কিছু পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—১. ১২টি ভিন্ন ভাষাভাষীর আদিবাসী নৃ-জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যগরিষ্ঠ চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা। ২. দুর্গমতা ও চাহিদার ভিত্তিতে আবাসিক বিদ্যালয় চালু। এখানে শিক্ষার্থীদের খাবার, খেলাধুলা ও পড়াশোনার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করছে। ৩. প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি উপযোগী অনেক পূর্ণাঙ্গ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা শিশুদের প্রারম্ভিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে পাড়াকেন্দ্র স্থাপন। ৪. সারা দেশে ১০০০ বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও নীতিমালার আলোকে বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু। ৫. জরাজীর্ণ, পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়সমূহে নতুন ভবন ও চাহিদাভিত্তিক শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ। ৬. দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি ওয়াল, প্লেইং কর্নার ও সুসজ্জিত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ। ৭. শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হচ্ছে গভীর নলকূপ, রিং ওয়েল ইত্যাদি। স্বাস্থ্যবিধি পালন করে শৌচকার্য সম্পাদনে অভ্যস্থ করতে নির্মাণ করা হচ্ছে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক ওয়াশ ব্লক। ৮. প্রতিটি বিদ্যালয়ে দেওয়া হচ্ছে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম, যাতে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করে কার্যকর শিখন নিশ্চিত করা যায়। ৯. বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে চলছে কি না যাচাইয়ের জন্য গতানুগতিক পরিদর্শন কার্যক্রমকে কার্যকর করতে ই-মনিটরিং, এপসভিত্তিক পরিদর্শন জোরদার করা হচ্ছে। বিভাগীয় পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা ছাড়াও জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে কার্যকর ও টেকসই শিক্ষা নিশ্চিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন। ১০. শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি-কৌশল উন্নয়নে, শিক্ষার্থীদের সুকুমারবৃত্তির বিকাশে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রজেক্ট। নেওয়া হচ্ছে ছোট ছোট কার্যকর পরিকল্পনা (এসআইপি)।

বিশ্বায়নের এ যুগে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ের পরিবর্তন, উন্নয়ন ও সংস্কার হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার জীবনাচরণের যে বৈচিত্র্য, তা কখনোই ঢাকার শিক্ষার্থীদের মতো হবে না। এই যে পরিবর্তিত পরিবেশ,  সেখানে শিক্ষাকে সংযুক্ত করতে হলে অবশ্যই আলাদা পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে শিক্ষা তাড়াহুড়ার কোনো বিষয় নয়। অদূরদর্শী ও অপরিকল্পিত পরিকল্পনার অসংযত বাস্তবায়ন একটি প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই উপর্যুক্ত গৃহীত ব্যবস্থাদির সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে ও সারা দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এ অঞ্চলের জন্য আলাদা কোনো কার্যক্রম সম্পূরক হিসেবে নেওয়া যায় কি না জরিপ করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা সংস্কার বোর্ড বা কমিশন করেও এটি করা যেতে পারে। দৈনন্দিন জীবনাচরণ, চিন্তাচেতনা, ভাব বিনিময় সবকিছু উত্কর্ষ সাধনের প্রয়োজনেই শিক্ষার বিস্তৃতি ঘটাতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীর ক্ষেত্রেও এটি একই। জাতীয় ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এবং জাতীয় সংহতি রক্ষার্থে অভিন্ন সামগ্রিক বিধি ব্যবস্থা থাকা যেমন অপরিহার্য তেমন বাস্তবতার নিরিখে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও  ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সৃষ্ট বিশেষ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর কার্যকর ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের কর্মসূচি গৃহীত হলেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় এসব আদিবাসী নৃ-জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত রচিত হতে পারে।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030879974365234