পিটিআই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সরাসরি নিয়োগ দেয়া হোক - দৈনিকশিক্ষা

পিটিআই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সরাসরি নিয়োগ দেয়া হোক

মো. সিদ্দিকুর রহমান, দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

পানির অপর নাম জীবন। আবার পানি যদি বিশুদ্ধ না হয়, তবে সে পানি পান না করলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। যথাযথ চিকিৎসা না করলে মৃত্যু অনেক সময় অনিবার্য হয়ে পড়ে। তেমনি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এ মেরুদণ্ড শক্তিশালী করার কাজে নিয়োজিত শিক্ষক। শিক্ষক যদি শিক্ষাদান ক্ষেত্রে সুশিক্ষা তথা সঠিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে না পারেন, তবে সে শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থী মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না।

এ নড়বড়ে ভগ্ন মেরুদণ্ড নিয়ে শিক্ষা মেরুদণ্ডহীন জাতিতে পরিণত হবে। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষক নিয়োগে সর্বপ্রথম কাজটা হবে, শিক্ষক নিয়োগের পূর্বেই সিইনএড, ডিপইনএড, বিএড, এমএড প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতা শুরু করা। উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার পর পূর্বের মতো আর ম্যানেজিং কমিটির কাছে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পরীক্ষা দিতে হয় না। প্রাথমিকে পিটিআইগুলোতে এক বছর প্রশিক্ষণে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি, ময়মনসিংহ এর নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সার্টিফিকেট-ইন এডুকেশন বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণসহ ৪ মাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুশীলন পাঠদান সফলভাবে সমাপ্ত করতে হয়। এতে প্রশিক্ষণ লাভের পর পরিপূর্ণ সফল শিক্ষক হিসাবে বের হয়ে আসে।

প্রশিক্ষণবিহীন প্রতিযোগিতা করে শিক্ষক নিয়োগ দিলে, তারা প্রকৃত শিক্ষক হন না। সে প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্তদের ৪ বছরের মধ্যে সিইনএড/ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণ নিয়ে পাশাপাশি প্র্যাকটিস টিসিং দিয়ে পরিপূর্ণ শিক্ষক হিসাবে যাত্রা শুরু করতে হয়। প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের পাঠদান হলো, ‘ট্রেনিং ছাড়া শিক্ষা, ছিদ্র থলির ভিক্ষা’। এতে শিক্ষার্থী, দেশ ও জাতির অগ্রগতি ব্যাহত হয়। স্বাধীনতার পর তৎকালীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা ব্যতিরেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগের জন্য প্যানেল করা হতো। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটা আবেদন প্রয়োজন ছিলো।

সে সময়ের নিয়োগ ছিলো ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত ও শিক্ষকতায় আগ্রহী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল।

বিগত সরকারের আমলে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তাতে পুরুষের জন্য স্নাতক ও নারীদের জন্য এইচএসসি পাসের যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের জন্য চাওয়া হতো গ্র্যাজুয়েট ৩ বছরের অভিজ্ঞতা। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বের বছরগুলোতে সিইনএড যোগ্যতা চাওয়া হতো। 

এ প্রেক্ষিতে মুক্তাগাছা হাজী কাশেম আলী, নেত্রকোনা বিরিগিরি ও কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র ইনস্টিটিউট পিটিআই থেকে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে সিইনএড কোর্সটি সম্পন্ন করা হতো। অথচ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে সিইনএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা উপেক্ষিত। প্রশিক্ষণবিহীন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ফলে সরকারিভাবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। ফলে একদিকে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। অন্যদিকে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক শূন্যতায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

নিয়োগের চার বছর সময় পর্যন্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণের তাগিদ না থাকায় শিশু শিক্ষার্থীরা দীর্ঘসময়ের প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকের কাছ থেকে ফলপ্রসু জ্ঞান অর্জমুখী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। সারা দেশের প্রতি বছর ৩০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণবিহীন নতুন শিক্ষক নিয়োগের ফলে প্রাথমিক শিক্ষা কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান অর্জনমুখী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। অপরদিকে, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে বেসরকারি তিনটি পিটিআই থেকে ৪ হাজারের বেশি প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রত্যাশায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) এর অধীনে বাংলাদেশ সিইনএড বোর্ড-এর প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সরকার অনুমোদিত ১ বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি চার মাস বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্র্যাকটিস টিচিংয়ের কার্যক্রম করেন। সিইনএড বোর্ড-এর লিখিত ও প্র্যাকটিস টিচিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষকতা চাকরির সুযোগ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধি ২০১৪ সংশোধন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের পূর্বের মতো সুযোগ প্রদানের উদ্দেশে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

যা জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া প্রকাশ পায়। অপরদিকে, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, প্রাথমিকের মন্ত্রী, সচিবসহ মহাপরিচালক বরাবর আবেদন-নিবেদন করে প্রায় চার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিয়োগবিধি সংশোধন করে শিক্ষকতা পেশায় চাকরি করার সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার জন্য সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ট্রেনিং বাধ্যতামূলক, যা সরকারি খরচে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার ৪ বছরের মধ্যে প্রদান করতে হয়। 

এতে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়। প্রতিবছর টেনিংবিহীন বিপুল সংখ্যক নিয়োগের ফলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বিপর্যস্ত হচ্ছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের পরবর্তী নিয়োগবিধি মোতাবেক পূর্বের প্রায় ৪ হাজার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক আগ্রহীদের শিশু শিক্ষার সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মীদের বঞ্চিত করে প্রশিক্ষণ বিহীন অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষার ধ্বংস অন্যতম চক্রান্ত। বেসরকারি শিশু শিক্ষা তথা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো চলছে প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকের মাধ্যমে। এইচএসসি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী ও গ্যাজুয়েট আনর্স ও মাস্টার্স প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সরাসরি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যৌক্তিক প্রত্যশা। সারা দেশের বিপুল সংখ্যক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তথা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে সিইনএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের  শিক্ষক হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। 

বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ বঞ্চিত সিইনএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ করা হোক। এতে একদিকে শিশুশিক্ষা সমৃদ্ধ হবে অপরদিকে শিক্ষিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব দূর হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকই পারে একমাত্র মানসম্মত শিশু শিক্ষা গড়ে তুলতে।

লেখক: শিক্ষাবিদ

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছার আগে নোট-গাইড ছাপা বন্ধের নির্দেশ - dainik shiksha পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছার আগে নোট-গাইড ছাপা বন্ধের নির্দেশ ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ইউএনওর খোলা চিঠি - dainik shiksha ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ইউএনওর খোলা চিঠি শিক্ষকদের সতর্ক করে বদলি আবেদনের তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha শিক্ষকদের সতর্ক করে বদলি আবেদনের তারিখ ঘোষণা ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাকৃবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি শুরু ৯ ডিসেম্বর - dainik shiksha বাকৃবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি শুরু ৯ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জুলাই আন্দোলনকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়া উচিত - dainik shiksha জুলাই আন্দোলনকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়া উচিত please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063037872314453