চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হলে শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিবৃতি প্রদান করেছেন নগর বিএনপি। তাদের মতে, পরিবেশন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ধরনের আচরণ অনাকাঙ্খিত এবং নিন্দনীয়।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
দলটির ওই দুই নেতা বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের প্রত্যেকের একে অপরের ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় আচরণ এবং যার যার স্বতন্ত্র আচার উৎসবের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই জোরজবরদস্তি কিংবা চাপিয়ে দেয়ার মতো কিছু যেন করা না হয়।
তারা আরও বলেন, জেএম সেন হলে যা ঘটেছে, তার জন্য কার দায় কতটুকু, এর পেছনে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এটুকু নি:সন্দেহে বলা যায়, যারা মঞ্চে উঠে গান করেছেন, তারা সুবিবেচনার পরিচয় দেননি। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামান্তর। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার্থী ভক্তরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, আমাদের দল বিএনপি, আমরা সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, ধর্ম যার যার কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশি। ভবিষ্যতে আমাদের মধ্যকার সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড রুখে দেয়ার জন্য আমরা প্রশাসন ও নির্বিশেষে সকল জনসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে জেএমসেন হল পূজা মণ্ডপের মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি গানের দল দুটি গান পরিবেশনা করে। সেই গানের ভিডিও পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা তৈরি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওই গানের দলের ছয় সদস্য গান পরিবেশন করতে মঞ্চে ওঠে। সংগঠনটি শাহ্ আবদুল করিমের লেখা বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’-শীর্ষক গান দুটি পরিবেশন করে। এর মধ্যে শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান-গানটির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমাদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ওই গানের দলটি পূজা মণ্ডপে এসে গান পরিবেশ করেছে বলে জেনেছি। তবে ওই সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি-র সভাপতি সেলিম জামানও দাবি করেছেন পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই তাদের একটি দল পূজা মণ্ডপে গান করতে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘পূজা উদযাপন পরিষদের সজল বাবু আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি ফোন করে বলেন ‘‘আপনারা একটু আসেন। আপনাদের একটু ফ্লোর (সুযোগ) দেব। কিছু দেশাত্মবোধাক গান গাইবেন।’’ সে আমন্ত্রণে গিয়ে আমাদের দলটি দুটি সম্প্রীতির গান করে। কিন্তু এটি নিয়ে একটা পক্ষ প্রচারণা চালাচ্ছে ষড়যন্ত্র করতেই আমরা গান করতে গিয়েছি। আমরা তো জোরপূর্বক কিছুই করিনি। দাওয়াত পেয়েই গিয়েছিলাম।’
এ ঘটনায় ওইদিন রাতে শিল্পী দলের জনের মধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে পুশিল জানিয়েছেন, এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে শহীদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়ীক সংঘাত লাগানোর চেষ্টা ছিল কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই ইসলামিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তকেও খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছে, শহীদুল করিম তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মো. নুরুল ইসলাম, দারুল ইরফান একাডেমীর শিক্ষক। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে ওই ঘটনায় পূজা উদযাপন কমিটি এক নেতা ও গান গাওয়া ছয় জনের বিরুদ্ধে নগরীর পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত, গান পরিবশেন করা চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো মামুন। এর মধ্যে ঘটনার দিন রাতে আটক হওয়া শহীদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলামকে গান পরিবেশন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।