টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় নিয়ম বর্হিভূতভাবে মো. সোহরাব হোসেন দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগও আছে। মাদরাসার শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের এখন একটাই দাবি আর কোনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নয়, পূর্ণ অধ্যক্ষ যেনো তাদের প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হন।
মাদরাসার নির্যাতিত শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন দীর্ঘদিন ধরে নজিরবিহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করে আসছিলেন। দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে স্ব-পদে বহাল রয়েছেন।
মাদরাসার নিজস্ব অর্থায়নে দুই কোটি ৮৪ লাখ টাকায় তিনি অন্যের জমিতে মার্কেট নির্মাণ করেছেন, সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক রোকসানা রিফাত দুই বছর ধরে মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সহায়তায় নিয়মিত বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করেছেন।
তিনি মাদরাসার বিভিন্ন খাত থেকে দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক চাই না। ইতোমধ্যেই এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সোহরাব হোসেনের পক্ষ নিয়ে একদল বহিরাগত ছেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ আছে। দ্রুত তাকে অপসারণ করে ভারপ্রাপ্ত নয়, একজন পূর্ণ অধ্যক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, গত ১৪ আগস্ট থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সোহরাব হোসেন প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। কোনো ধরনের লিখিত আবেদন ছাড়াই তিনি ছুটিতে আছেন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসক এখন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। তার স্বাক্ষরেই সব কাজ হচ্ছে। কিন্তু দৈনন্দিন কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর দরকার হয়, শিক্ষক-কর্মচারীদের ছুটির প্রয়োজন হয়, এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের একজন অধ্যক্ষের প্রয়োজন। তবে ভারপ্রাপ্ত নয়, অবশ্যই তা শিক্ষকবান্ধব পূর্ণ অধ্যক্ষ চাই।
উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং কমিটির পূর্বনির্ধারিত সভা ছিলো। সভায় তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কথা উঠলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা হঠাৎ মাদরাসা ও হোস্টেলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এ সময় ছাত্র-জনতা ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়।
এ বিষয়ে মাদরাসার পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত ১৯ আগস্ট মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে দারুল উলুম কামিল মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। এরপর ২০ আগস্ট দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ২২টি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।