বিদ্যমান সরকারি পেনশন ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
গত রোববার দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার প্রধান সম্পাদক এবং শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম এর সম্পাদক ও প্রকাশক সিদ্দিকুর রহমান খান এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় সম্প্রতি প্রকাশিত তার লেখা ‘কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা’ শীর্ষক গ্রন্থটি ভিসির হাতে তুলে দেন দৈনিক শিক্ষাডটকম সম্পাদক।
আলাপচারিতার এক পযায়ে গত ১৩ মার্চ প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনের গেজেটটির প্রসঙ্গ আসে। যাতে আগামী ১ জুলাই বা তার পরে রাষ্ট্রায়ত্ত-স্বায়ত্তশাসিত ও সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করার ঘোষণা রয়েছে।
ওই প্রজ্ঞাপন প্রসঙ্গে ভিসি মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এর ফলে ভাল কিছু হবে না। আমি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কথা বলবো।’
এর আগে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম এবং মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এক বিবৃতিতে ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তারা বলেন, হঠাৎ করেই এমন একটি প্রজ্ঞাপন জারির ফলে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। একই বেতন স্কেলের আওতাধীন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ভিন্ননীতি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এই প্রজ্ঞাপন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনের প্রতি চরম অবমাননা প্রদর্শনের শামিল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই প্রজ্ঞাপনের ফলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসতে আগ্রহী হবেন না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। এটি দুরভিসন্ধি কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানায় ফেডারেশন।
যাদের জন্য সংশোধিত প্রজ্ঞাপন :
সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা সংশোধন করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তা প্রায় ৪০০ সংস্থার ওপর কার্যকর হবে। যেসব সংস্থা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি অর্থায়নে চলে, সেগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। আর স্বশাসিত বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বোঝানো হয়েছে সেগুলোকে, যারা কোনো আইনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা। এর মধ্যে কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, কমিশন, সংস্থা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউশন, কাউন্সিল, একাডেমি, ট্রাস্ট, বোর্ড, ফাউন্ডেশন ইত্যাদি রয়েছে।
এর বাইরে দুর্নীতি দমন কমিশন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), জীবন বীমা করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ইত্যাদি রয়েছে এ তালিকায়। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন ১৪ লাখের বেশি।
কেন এই সিদ্ধান্ত
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে গত আগস্টে চালু হয় সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। তখন চার শ্রেণির মানুষের জন্য চারটি স্কিম চালু হয়। সে সময় একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় সুবিধামতো সময়ে সরকার আরও দুটি স্কিম চালু করে স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ কর্মসূচির আওতায় আনবে। সে ধারাবাহিকতায় এ সিদ্ধান্ত এসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কোনো বিষয়ে সংস্কার আনা মানেই কিছু অংশ লাভবান হবেন, আবার কেউ কেউ কিছুটা হলেও ক্ষতির মুখে পড়বেন। তবে সরকার এসব ক্ষেত্রে বেশি সংখ্যক যেন লাভবান হয়, সেদিকে নজর দিয়ে থাকে। নতুন এ ব্যবস্থায় অল্প কিছু সংখ্যক সুবিধা হয়তো কমবে, কিন্তু এর বিপরীতে বড় একটি অংশ বাড়তি লাভবান হবেন। তাছাড়া নতুন বিধান বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এমনকি আগামী জুলাইয়ের আগে কেউ যোগ দিলে, তারাও এখনকার নিয়মে পেনশন পাবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন সিদ্ধান্তে আসার আগে এ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যমান পেনশন সুবিধা পর্যালোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন কমিশন ও করপোরেশনে সরকারি কর্মচারীদের আদলেই পেনশন দেওয়া হয়, যা এ ধরনের মোট প্রতিষ্ঠানের ২৫ শতাংশের বেশি নয়। এর বাইরে প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলের (সিপিএফ) মাধ্যমে অবসর সুবিধা দেওয়া হয়। এ তহবিলে চাকরিজীবীরা তাদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ জমা দেন, আর সংস্থা দেয় ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অবসরের পর এ টাকা এবং এর বাইরে প্রতিবছর দুই মাসের মূল বেতনের সমান আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) পান তারা। আবার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলও নেই। এ ক্ষেত্রে অবসরের পর চাকরিজীবীরা শুধু গ্র্যাচুইটি পেয়ে থাকে। তবে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, সবাইকে একই সঙ্গে এ কর্মসূচির আওতায় আনার সক্ষমতা সরকার কিংবা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নেই। এখন স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থাকে এর আওতায় আনা হলো। কিছুদিন পর হয়তো নন-গেজেট সরকারি চাকরিজীবী, পরে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।