দৈনিক শিক্ষাডটকম, নোয়াখালী : নোয়াখালীর হাতিয়ায় চর আফজল ভূমিহীন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক চরিত্র, বদমেজাজী স্বভাব, শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত, বই বিতরণ, উপবৃত্তি ও পরীক্ষার ফি’র নামে চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় মাইন উদ্দিন এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেনের সংঘটিত অন্যায়, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিচার চেয়ে স্থানীয় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক-পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গতকাল সরজমিন গেলে বেলা সাড়ে ১১টায়ও বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ বা শ্রেণিকক্ষের কোথাও দেখা মেলেনি ওই প্রধান শিক্ষকের।
মাইন উদ্দিন বলেন, ৩রা ফেব্রুয়ারি তার পুত্রকে সামান্য ভুলের দায়ে গায়ের জেকেট খুলে বেদম মারধর করেছে প্রধান শিক্ষক। এতে তার ওই পুত্রের হাতের আঙ্গুল ও বাম হাত ভেঙে গেছে। তিনি জানান, ফজলুর রহমান নামে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে রামগতি হতে এখানে সাময়িকভাবে বদলি করে পাঠানো হয়েছে। তাকেও বেত্রাঘাত করেছেন প্রধান শিক্ষক আখতার। তবে ওই শিক্ষক এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। এদিকে, বেশ কয়েক বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে শিক্ষকতা করেছিলেন রাবেয়া সুলতানা। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ওই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণকালে তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক আখতার। রাবেয়া জানান, তিনি ওই টাকা দিতে না পারায় অন্য ব্যক্তির নাম শিক্ষক, শিক্ষিকার তালিকায় পাঠিয়ে তাকে প্রতারিত করা হয়েছে।
রাবেয়া দীর্ঘ কয়েক বছর অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একপর্যায়ে, হতাশ হয়ে হাতিয়ায় দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছেন তিনি। মামলা দায়েরের অজুহাতে ওই শিক্ষিকার দুটি বাচ্চাকেও বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেননি প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেন। বিষয়টি চরম অমানবিক বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি জাফর আহমদ বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা কমিটির লোকজন সহসাই এসব নিয়ে বসবো। বইয়ের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আখতার বলেন, হাতিয়া থেকে বই আনতে প্রায় সাড়ে নয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে ওঠে হয়তো বা ছয় বা সাত হাজার টাকা। তিনি বলেন, বাকিটা আমার পকেট থেকে দিয়েছি।স্থানীয়রা আরো জানান, এ বিদ্যালয়ের পাশেই প্রধান শিক্ষক আখতারের বাড়ি। যে কারণে বিদ্যালয়টিকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। এ ছাড়া কোনো অভিভাবক কিংবা কোনো সচেতন নাগরিক তার এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তার পুত্র সেসব অভিভাবকের হেনস্তা করে বলেও জানান স্থানীয়রা। কয়েক অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেন নিজের আয়ত্তে অনেকগুলো সিম রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরের স্থলে নিজের কাছে রক্ষিত সেসব সিম নম্বর দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির এক বৃহদাংশ অর্থ লোপাট করছেন তিনি। অবশ্য আখতার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো ডাহা অসত্য বলেই দাবি করছেন। এ বিষয়ে নোয়াখালীর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, এ রকম একটা অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। অফিস খোলার পরই এ বিষয়ে অবশ্যই খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ চলছে।