বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তোলপাড়া চলছে দেশজুড়ে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, প্রশ্নফাঁসের শাস্তি কী? যেসব পরীক্ষারর প্রশ্নফাঁস হয়েছে সেগুলোতে নির্বাচিতদের নিয়োগ কি বাতিল করা সম্ভব?
পিএসসির সাবেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনজীবী সকলেই বলছেন যে, নিয়োগ হওয়ার আগ অবধি পরীক্ষা বাতিল করা গেলেও নিয়োগ বাতিল করা ‘অসম্ভব’ ব্যাপার।
এ ব্যাপারে সাবেক শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্য, ‘নিয়োগ পুরোপুরি বাতিল করলে আরেকটা জটিলতা হবে। ইতোপূর্বে যেসব নিয়োগ হয়েছে, সেগুলো বাতিল করার এখতিয়ার পিএসসির নাই। তবে দোষীকে আইনের আওতায় আনা যাবে।’তিনি আরো বলেন, ‘পুরনো সব পরীক্ষা যদি বাতিলও করা হয় তবে তা হাইকোর্টে টিকবে না।’
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খানও প্রায় একই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যেগুলো অনেক আগে নিয়োগ হয়ে গেছে, সেগুলো বাতিল করার সুযোগ নাই।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০’ এ প্রশ্নফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করতে হবে কি না, এ বিষয়ে সেখানে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। কিন্তু আইনে সুনির্দিষ্টভাবে সেরকম কিছু বলা না থাকলেও এটি জেনারেল কনসিকুয়েন্সেস। যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় ও তা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তো পরীক্ষা বাতিল হওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খানও বলেন, ‘আইনে সুর্নির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে কিছু বলা না হলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করে দিতে পারবে পিএসসি। সেই ক্ষমতা পিএসসি’র আছে। তবে পিএসসিকে সেটি প্রমাণ করতে হবে।
এর আগেও পিএসসি পরীক্ষা বাতিল করেছিলো স্মরণ করিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আইনে যা-ই থাক, কিন্তু যদি শোনা যায় যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তাহলে প্রশাসনিক দিক থেকেই তো সেই পরীক্ষা বাতিল করা উচিৎ।’
যদিও খুরশিদ আলম খান মনে করেন, এক যোগে পুরো নিয়োগ বাতিল করা সম্ভব না। আগে চিহ্নিত করতে হবে যে কে ফাঁস করলো ও ফাঁসের পরীক্ষায় কে পাস করলো। এটা তদন্ত ছাড়া সম্ভব না। তদন্ত হলেও আইনগত অনেক জটিলতা আছে।
এদিকে এই প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় যার নাম সামনে আসছে, তিনি হলেন সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। সংবাদ মাধ্যমে খবর আসছে যে যারা প্রশ্ন কিনেছেন, তিনি তার স্বীকারোক্তিতে সেই নামগুলো বলে দিচ্ছেন।
আবেদ আলী’র স্বীকারোক্তি ব্যাপারে খুরশীদ আলম খান বলেন, সেটি যাচাই করতে হবে যে তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন কি না বা সঠিক বলছেন কি না। তার স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে মন্তব্য করা যাবে না।
এদিকে আবু আলম শহীদ খান বলেন, ১০-১৫ বছর আগের পরীক্ষা বাতিলের কোনও সুযোগ এখন নাই। নিয়োগ তো হয়ে গেছে। এখন পরিপূর্ণ তদন্ত করে বের করতে হবে যে বেনিফিশিয়ারি কারা।
তিনি মনে করেন, যারা বেনিফিশিয়ারি, অর্থাৎ যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নিয়েছেন এবং প্রশ্ন কিনে উত্তর মুখস্থ করে পরীক্ষা দিয়েছেন, তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং তারা যাতে অন্য কোনও সরকারি চাকরির জন্যও বিবেচিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করা উচিৎ।
প্রসঙ্গত, ১৯৮০ এর পাবলিক পরীক্ষা আইনে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে প্রশ্নপত্রের প্রকাশনা ও বিতরণ সম্বন্ধে উল্লেখ আছে, কেউ যদি পরীক্ষার আগে কোনও উপায়ে প্রশ্ন ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করেন, তাহলে ‘তিনি চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
তবে এই আইনে সাজা কম হলেও দুদকের আইনে প্রশ্নফাঁসের সাজা সাত বছর। সূত্র: বিবিসি
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।