শিক্ষককের আসন বড়ই সম্মানের। শিক্ষকের আসনে কখনো ছাত্র বসে না। এমনকি ছাত্র যখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয় তখনো শিক্ষককের চেয়ারে বসতে ইতস্তত বোধ করে শিক্ষকের প্রতি গভীর ভালবাসা ও সম্মানের কারণে। হাল জামানায় ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক আহত, নিহত হওয়া, শিক্ষককে চেয়ার থেকে টেনে নামানোর মতো ঘটনা ঘটছে! তবে একক কোনো ছাত্র-শিক্ষককে অসম্মান করলে তা বিচ্ছিন্ন বা ছাত্রের মানসিক সমস্যা হিসেবে গণ্য করার সুযোগ থাকে। কিন্তু দলবদ্ধভাবে ছাত্ররা শিক্ষককে অপমান করলে শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের চরম ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলতে হবে। শিক্ষা এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে সেখান থেকে সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে সত্যি কঠিন হবে। রাজনীতির পট পরিবর্তন হলে দেশে সাময়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় যা অতীতে হয়েছে এবারও হয়েছে।
মাধ্যমিক ও কলেজের দলকানা কতিপয় প্রধান এমন সব কার্যকলাপ করে বসেছেন যার খেসারত গোটা শিক্ষক সমাজকে দিতে হচ্ছে। বিগত এক যুগে শিক্ষকের পেশাদারিত্ব ও শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ছাত্রদের উশৃঙ্খল আচরণের জন্য শিক্ষকের অনৈতিক কার্যকলাপ ও শিক্ষাব্যবস্থাই দায়ী। বর্তমানে ছাত্রের চেয়ে শিক্ষকের নৈতিক অবক্ষয় কোনো অংশে কম নয়। বছর দুই আগে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার শীর্ষক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং তাদের পুরস্কার দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ৫ হাজার/ ১০ হাজার টাকা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। সেই টাকা থেকে ৫০০ বা ১ হাজার টাকার পুরস্কার কিনে বাকি টাকা প্রধান শিক্ষক পকেটে রাখেন। আমার এক বন্ধু তার স্কুলের পেনসিল, ইরেজার, কলম পুরস্কারে ছবি পাঠিয়ে অনুরোধ করেন দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার শীর্ষক সচেতনতা সৃষ্টির অনুষ্ঠানেই দুর্নীতির মহা-উৎসব হচ্ছে এ বিষয়ে কিছু লেখার জন্য। শিক্ষক হিসেবে চক্ষু লজ্জা এবং দুঃশাসনের ভয়ে বন্ধুর অনুরোধ রক্ষা করতে পারিনি। যে শিক্ষক এ সামান্য টাকার লোভ সামলাতে পারে না তার দ্বারা প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ টাকা হেফাজত কীভাবে সম্ভব? বিগত দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাব এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছিলো দলীয় শিক্ষকেরা রাতকে দিন বানিয়ে ফেলেছেন।
তাদের সকল অন্যায় অবিচার ছাত্র, অভিভাবক, বাকি শিক্ষকদের নীরবে সহ্য করতে হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পর শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া দেশের সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রদের নৈতিক অবক্ষয়ে ভূমিকা রাখছে। সংক্ষুব্ধ ছাত্র, অভিভাবক যেভাবে শিক্ষককে বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে টেনে-হেঁচড়ে নামাচ্ছে তা সমর্থন যোগ্য নয়। দুর্নীতিবাজ, নৈতিক স্খলন শিক্ষকের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু তা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মাধ্যমে নয় সেটা হতে হবে অবশ্যই আইন সম্মত বিধি মোতাবেক। ছাত্ররা অন্যায়ভাবে শিক্ষককে অপসারণ করছে কেউ যেনো এটা বলার সুযোগ না পায়। ইতোমধ্যে পদত্যাগের ঘটনা পুঁজি করে অসৎ ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করে ছাত্রদের আন্দোলনের বিশাল অর্জনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, রাষ্ট্রের সব সেক্টরে আইন মোতাবেক, বিধি সম্মতভাবে দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ও সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। নতুন বাংলাদেশ বৈষম্যমুক্ত, শোষণমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বাগ্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক, দনারাম উচ্চ বিদ্যালয়