প্রাথমিকে রমজানের বন্ধ : শিক্ষক-শিক্ষার্থীর করণীয় - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিকে রমজানের বন্ধ : শিক্ষক-শিক্ষার্থীর করণীয়

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যতিরেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রমজান মাসে বন্ধ। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের আগে প্রাথমিক, উচ্চবিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা কারিগরিসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের  বার্ষিক ছুটি ছিলো ৮৫ দিন। শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক বিকাশসহ পড়াশোনার চাপ কমিয়ে শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করার লক্ষ্যে শিক্ষাবান্ধব সরকার কর্তৃক সাপ্তাহিক শুক্র-শনি..২ দিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখার উদ্যোগে সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।

বঙ্গবন্ধু বৈষম্যের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। চরম অভাবের মাঝে বঙ্গবন্ধু জেলা বোর্ডের মিউনিসিপ্যালেটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সর্বস্তরের শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে দুঃসাহসী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তারই আদর্শে অনুপ্রাণিত জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৬১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে আরেকটি অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে আগের প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কৃত জাতীকরণযোগ্য ৪১৫৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজও জাতীয়করণের আওতায় আসেনি। এর ফলে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা ও কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় খোলাকে পৃষ্ঠাপোষকতা করা হচ্ছে। 

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ছুটি ৫৪ দিন। উচ্চবিদ্যালয়ের ছুটি ৭৬ দিন।প্রাথমিক ছাড়া সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি অভিন্ন। স্বাধীন দেশে একই অভিভাবকের সন্তান উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক, মাদরাসা, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে থাকেন। ছুটির বৈষম্য থাকার ফলে পারিবারিক, সামাজিক উৎসব, আত্মীয়স্বজনদের বাড়িসহ নানা স্থানে বেড়াতে যেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। রমজান মাসে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। কেবল খোলা থাকবে শিশুদের স্বর্গীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সংশ্লিষ্টদের হয়তো ভাবনা, রমজানে স্কুলে লেখাপড়া করে শিশুদের শিখন ঘাটতি দুর করে স্বর্গে চলে যাবে। বাস্তবে স্বর্গে তো নয়, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা নরকে যাবে। শিশুর পড়াশোনা আনন্দদায়ক করার লক্ষ্যে খেলাধুলা, বিনোদন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেড়ানোর সুযোগ বেশি থাকার বিকল্প নেই। বিশেষ করে প্রাথমিকের শিশুরা পবিত্র রমজান মাসে কায়দা, আমপারাসহ পবিত্র কোরআন শরীফ সহিভাবে শেখার জন্য মসজিদ মক্তব বা নিজ গৃহে ওস্তাদ রেখে পড়াশোনা করে থাকেন। 

তৃতীয় শ্রেণি থেকে ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীর রোজা রাখেন। প্রচন্ড গরমের তীব্রতায় রোজা রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থী শ্রেণির কার্যক্রম করা কষ্টকর। শিক্ষকতা অফিস-আদালতে কাজকর্মের চেয়ে কঠিনতম কষ্টের পেশা। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ মুসলমান বিধায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকবে অতি নগন্য। রোজার মাসে শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অহেতুক যন্ত্রণা দেয়ার ফলাফল ভাল হতে পারে না। অভিভাবকদের মাঝে জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব  সৃষ্টি হতে থাকবে। বর্তমানে এর ফলে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা ও কিন্ডারগার্টেনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালবাসা দৃঢ় হবে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে এহেন নিষ্ঠুরতম হৃদয়হীন কর্মকান্ডের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মাঝে গভীর ক্ষোভ ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বা তাদের আত্নীয়-স্বজনদের সন্তানদের ছায়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝে পড়ে না। তাদের সন্তানরা তো নির্বিঘ্নে ছুটি উপভোগ করবে। আজ সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের করালগ্রাস থেকে মুক্ত হয়নি প্রাথমিক শিক্ষা। বৈষম্য নিরসনে সংশ্লিষ্টরা অনেকটা শ্রবণ প্রতিবন্ধীর মতো না শোনার ভান করে থাকেন। যার ফলে আগামী প্রজন্মের শিশুর চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্খা পদদলিত হচ্ছে। 

বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির বৈষম্য দূরীকরণের জন্য ৫-৩-২০২৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। পাশাপাশি অনুলিপি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালককেও দেয়া হয়েছে। 

মার্চ মাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। এ মাসে স্বাধীনতা অর্জন ও ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতিকে দিক-নির্দেশনামূলক বঙ্গবন্ধুর ভাষন দিয়েছেন। মাসটি বাঙালির জন্য অবিস্মরণীয়। অপরদিকে মার্চে পবিত্র মাহে রমজান শুরু। এ পবিত্র মাস দোয়া কবুলের মাস। পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিলের মাস। প্রাথমিক শিক্ষায় বৈষম্য নিরসনে আমাদের করণীয় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারসহ সকল শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষায় যারা গিট্টু লাগিয়ে বৈষম্য বা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে আল্লাহর খাস রহমত যাতে তাদের ওপর নাজিল হয়, এ জন্য দোয়া করা। দোয়া করা ছাড়া এ সময়ে প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আর বিকল্প কিছু দৃশ্যমান নয়।

বিশেষ করে শিশু ও শিক্ষকদের দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন। শিশুরা নিষ্পাপ। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। প্রাথমিক শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণে আল্লাহর রহমত কামনায়। জয় বাংলা। 

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষাডটকম    

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056231021881104