টানা বৃষ্টিতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও ২৫টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে আছেন দুই লক্ষাধিক বাসিন্দা।
মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, তিন উপজেলায় নগদ সাত লাখ টাকা ও ৬৩ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। বৃষ্টি না হলে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
সানোয়ার হোসেন বলেন, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারী ও শিশুসহ কয়েক শতাধিক মানুষ উঠেছে; সেখানে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে কংস নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা ধোবাউড়া উপজেলার আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে গত এক সপ্তাহ ধরে ঘরের চারপাশে পানি। পোলাপান নিয়ে পানির মধ্যে খুব কষ্টে আছি। গত সোমবার শুধু একটি সংগঠন আমাদের খাবার দিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে এখনও কেউ খোঁজ-খবর নেয়নি।
আরেক বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সকালে পানি বাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। নদীর পাশে বসবাস করায় তাদের সবসময় আতঙ্কে কাটাতে হচ্ছে। কখন পানি বেড়ে ঘর ডুবে যায়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মিনতি রানী পাল বলেন, বন্যায় পূজার আনন্দ ম্লান হয়েছে। দুবেলা খাবারই কপালে জুটছে না। তাহলে পূজা কীভাবে করব। সরকার সহযোগিতা করলে অন্তত সন্তানদের নিয়ে চলতে পারতাম।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, বন্যার পঞ্চম দিনে সকালে বৃষ্টি হওয়ায় পানি কিছুটা বেড়েছে। সেইসঙ্গে নতুন কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বানভাসিদের শুকনো খাবারের পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সকালের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নতুন করে উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নসহ চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরও ১৬টি গ্রাম। বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে হালুয়াঘাটে বন্যার সৃষ্টি হয়। উজানের পানি কমে এখন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮ হাজার পরিবার।
সাময়িকভাবে বন্যার্তদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি ক্ষতি নিরূপণ করে সামগ্রিক সহযোগিতা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হবে।