দৈনিক শিক্ষাডটকম, দিনাজপুর : প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্কুলের উপস্থিতি নিশ্চিত ও তদারকি করার লক্ষে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ১৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয় ও স্থাপন করলেও সেটি মুখথুবড়ে পড়ে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বাক্সবন্দি ওই বায়োমেট্রিক মেশিন। অধিকাংশ স্কুলেই পড়ে আছে অকেজো মেশিন আর কিছু প্রতিষ্ঠানে ওই মেশিনের দেখাই মেলেনি। ফলে প্রায় ৩৫-৪০ লাখ টাকা ব্যয়ের এই কার্যক্রম আলোর মুখই দেখেনি।
জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্লিপ প্রকল্প থেকে যন্ত্রটি কেনা বাবদ ব্যয় নির্বাহ করা হবে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বে যন্ত্রটি কিনে নেবে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন পত্রের মাধ্যমে একাধিকবার মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলার ১৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপের বরাদ্দ থেকে ডিজিটাল হাজিরার বায়োমেট্রিক মেশিন কেনার জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো। যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যাচাই করে মেশিন ক্রয়ের কথা থাকলেও শিক্ষা অফিসের নির্দেশনায় একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে মেশিন ক্রয় করেছেন সবাই। সেই সময়ে শিক্ষা অফিসের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। এই বায়োমেট্রিক মেশিনগুলো লাগানোর ৬-৭ মাস পরই নষ্ট হয়ে যায়। যন্ত্রটি চালু রাখতে প্রয়োজন হয় বিদ্যুৎ সংযোগ, ইন্টারনেট কানেকশন ও কম্পিউটার। বিদ্যালয়গুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও নেট সংযোগ ও কম্পিউটারের অপ্রতুলতায় এই কার্যক্রম ভেস্তে যায়। এখন ব্যবহার না হতে হতে মেশিনগুলোরীতিমতো জঞ্জালে পরিণত হয়েছে।
এদিকে বুধবার সরেজমিনে উপজেলার আংগারপাড়া ময়দান ডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর দুবুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ভবকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হোসেনপুর ভুল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ওসব প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক মেশিন বাক্সবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সেগুলোর ব্যবহার করা হচ্ছে না। আর কয়েকটি স্কুলে ওই মেশিন অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকলেও সেগুলো সংস্কারে তেমন তৎপরতা নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদুল হক বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিপূর্বে বায়োমেট্রিক মেশিনগুলো স্থাপন করা হলেও সেই মেশিনগুলো অধিকাংশ অকেজো হয়ে গেছে। এগুলো মেরামতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সফলতা আসছে না। মেশিনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন জানান, আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জানলাম। উপজেলা পরিষদের আগামী মাসিক সভায় এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।