২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট শিক্ষকদের কল্যাণে রাখার অভিপ্রায়ে ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জমি মিরপুর কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে এনে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পদ সংরক্ষণ কমিটি। স্মারকলিপির অনুলিপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরও পাঠানো হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট ও মিরপুর ১৩ নং প্রাথমিক শিক্ষক ভবনের নামে দশ কাঠা জমি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অর্জন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। বর্তমানে কল্যাণ ট্রাস্টে জমাকৃত টাকা প্রায় ৪০ কোটি। বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা থাকা সত্ত্বেও ৯৫ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষক ট্রাস্টের সদস্য হননি।
Government Primary School Teachers Welfare Trust Ordinance 1985 ১৯৮৫ মোতাবেক সরকারি অনুদান ও এককালীন ২০ টাকা ও বাৎসরিক চাঁদা দুই টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সব শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৮৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষকেরা নিয়মিত চাঁদা প্রদান, তাদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, নিজ বা পরিবারের চিকিৎসা, শিক্ষকদের মৃত লাশ দাফনের খরচ, প্রাকৃতিক বা আকস্মিক বিপদে আর্থিক সহযোগিতা ছিলো নিয়মিত। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের পর যথাযথ শিক্ষক নেতৃত্ব বিশেষ করে সদস্যসচিব বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বাইরে থাকায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য করা সম্ভব হয়নি।
এতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি গভীর মমত্ববোধ থাকা স্বত্ত্বেও তারা অনুদানের ২৫ কোটি টাকাসহ ট্রাস্টের জমাকৃত প্রায় ৪০ কোটি টাকা প্রাথমিক শিক্ষকদের কোনো কল্যাণে আসছে না। কল্যাণ ট্রাস্টের কোনো সদস্য ছাড়া কোনো শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সহযোগিতা বা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০২৩ এর কতিপয় ধারা সংশোধনের প্রয়োজন।
কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০২৩ এর ২৮ নং আইনে ১২ নং ধারায় বলা হয়েছে। এই আইনের অধীনে সুবিধা লাভের পূর্ব শর্ত-
১. এই আইনের যাহা কিছুই থাকুক না কেনো কোনো শিক্ষক তাহার নিয়োগের ছয় মাসের মধ্যে প্রাথমিক চাঁদা হিসেবে ট্রাস্ট কর্তৃক নির্ধারিত এককালীন অর্থ এবং নির্ধারিত হারে বার্ষিক চাঁদা ট্রাস্টে জমা প্রদান না করলে তিনি এই আইনের অধীনে কোনো সুবিধা লাভের অধিকারী হবেন না।
২. উপধারা ১-এর অধীনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ করতে হইবে। কল্যাণ ট্রাস্টে যথাযথ শিক্ষক প্রতিনিধি ও চাঁদা পরিশোধের পদ্ধতি ক্রুটিপূর্ণ হওয়ায় বর্তমানে প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষক চাঁদা পরিশোধ করে সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারেনি। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নেতৃত্বে ৯৮ শতাংশ শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য ছিলেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টে প্রাথমিক শিক্ষকদের সম্পৃক্ত না করে তাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা কোন অবস্থায় কাম্য নয়। এ প্রেক্ষাপটে কতিপয় প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হলো।
১. বর্তমান সদস্য হওয়ার জন্য বার্ষিক চাঁদা ২০০ টাকা। এ টাকার পরিমাণ কমিয়ে ৫০ টাকা করে প্রত্যেক শিক্ষককে ছয় মাসের মধ্যে সদস্য হওয়ার সুযোগ প্রদান করা হোক। কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চাঁদা প্রদান করে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষকেরা সুযোগ-সুবিধা পেতেন। অথচ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের আইনে এ সম্পর্কে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৫ কোটি টাকার অনুদানসহ কল্যাণ ট্রাস্টের বর্তমান জমাকৃত অর্থ প্রায় ৪০ কোটি টাকা। সকল শিক্ষককের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সদস্য করা হলে আরো বিশাল পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর জমা হবে।
কল্যাণ ট্রাস্টের বিশাল কর্মকাণ্ড গতিশীল ও সব শিক্ষকের কাছে গ্রহণযোগ্য করা অভিপ্রায়ে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সেই লক্ষ্যে তাদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে থানা/উপজেলা পর্যায়ে একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রয়োজন। উক্ত প্রতিনিধি তৃণমূল পর্যায় কল্যাণ ট্রাস্টের চাঁদা আদায়সহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির কাজে সহযোগিতা করবেন।
বিভাগীয় ও ঢাকা মহানগরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সরাসরি উপজেলা/থানা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হোক। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এ বিশাল সংগঠনের দায়িত্ব পালন করার জন্য সার্বক্ষণিক প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে কল্যাণ ট্রাস্টি এর একজন সাবেক অবসরপ্রাপ্ত সদস্যকে থানা/উপজেলা প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচিত করা হলে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব একদিকে নির্বাচিত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি।
অপরদিকে, শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। বর্তমান ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ নং আইনে ট্রাস্টির বোর্ড গঠনে ২ উপধারা মোতাবেক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশাসন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশাসন তার বিশাল দায়িত্বের বাইরে আন্তরিকতা থাকলেও সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে না। অপরদিকে, দীর্ঘ ৩৮ বছর প্রাথমিক শিক্ষকেরা তাদের অর্জন কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব পদটি থেকে বঞ্চিত করায় হতাশ ও ক্ষুদ্ধ। শিক্ষকদের আস্থাভাজণের নির্বাচিত সদস্য সচিব ও নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট তাদের সম্পৃক্ত করতে সম্ভব হবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক প্রশাসন তেমন সম্পৃক্ত আছে বলে দৃশ্যমান নয়। এক্ষেত্রে উক্ত সদস্য পদের পরিবর্তে উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা ঢাকা বিভাগকে সদস্য হিসেবে ট্রাস্টি বোর্ডে গ্রহণ করলে অধিকতর কার্যকর হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মচারী-শিক্ষকদের পোষ্যদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানে বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যাশা রইলো। যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ও কল্যাণে এ ট্রাস্ট গঠিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পোষ্যদের নিয়োগ মাধ্যমে তাদের কল্যাণ নিহিত। এ ছাড়াও বর্তমানে মিরপুর ১৩ নং বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নামে ১০ কাঠা ভূমি অবৈধ দখলদার দখলে আছে। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সকল শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে ১০ কাঠা জমিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর সদয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশা করছি। প্রাথমিক শিক্ষকদের অর্জন তাদের কল্যাণে হোক এ প্রত্যাশা রাখছি।
লেখক: সদস্যসচিব, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সম্পদ সংরক্ষণ কমিটি