প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, প্রাবন্ধিক, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষক এবং সাবেক সংসদ সদস্য বেবী মওদুদকে মরণোত্তর ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টির উদ্যোগে প্রথমবারের মতো এই স্বর্ণপদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সোমবার উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ মনোনয়ন কমিটির এক সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টির পরিচালক অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ দেয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি মনোনয়ন কমিটি গঠন করা হয়।
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক-লেখক ও নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং সাবেক সংসদ সদস্য এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরোনাম আনা মাহফুজা খাতুন। তবে বেবী মওদুদ নামেই তিনি সর্বত্র পরিচিত। এ নাম তাকে ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে সাহিত্য, সাংবাদিকতার জগতে নিরলস, সাহসী, প্রতিবাদী ইতিবাচক উদ্যোমের জন্য। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। এ একই সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত হন। ৬৯ এ আসাদ হত্যার পর রাজপথের মিছিলে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ঠিক সেই সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের তিনি ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বেবী মওদুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে অনার্স এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ওষুধপত্র সংগ্রহ, নির্যাতিত নারীদের আশ্রয় এবং বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গবেষণা গ্রন্থ, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, জীবনীগ্রন্থসহ সাহিত্যের নানা অঙ্গনে তিনি সফলভাবে বিচরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক গ্রন্থসহ বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুলাই পরলোক গমন করেন এ কৃতিমান নারী।