ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - দৈনিকশিক্ষা

ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৯ মার্চ। তবে পরীক্ষার দিনই প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি খোদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও অবগত ছিল। এর পরও সেই প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং ২১ এপ্রিল ফল প্রকাশ করা হয়। এরই মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচজনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।  গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুরো ঘটনা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে।

বুধবার জাতীয় দৈনিক কালবেলার ক্রাইম রিপোর্টার আতাউর রহমানের লেখা প্রতিবেদনের বিস্তারিত পড়ুন:

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে, পরীক্ষার দিন মাদারীপুর জেলার পাঁচটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। টাকার বিনিময়ে চক্রের পরীক্ষার্থী সদস্যরা পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে চক্রের সমাধানকারী গ্রুপের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরপর তা দ্রুত সমাধান করে টাকা নেওয়া বা চুক্তি করা শিক্ষার্থীদের কাছে ডিভাইসের মাধ্যমে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা জ্যোতির্ময় গাইন, সুজন চন্দ্র রায়সহ অন্তত পাঁচজনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। জ্যোতির্ময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ভবনের ২২৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র এবং সুজন একই হলের সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৯০০৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র।

গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার (তৃতীয় ধাপ) প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ডিএমপির রমনা থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তারা তদন্ত করছেন।

ঢাবির জগন্নাথ হলে সমাধান হয় প্রশ্নপত্র: তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ (তৃতীয় ধাপ) পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দ্রুত সমাধান করতে রীতিমতো একদল মেধাবী ছাত্রের সমন্বয়ে ‘অফিস’ খোলা হয়। এই অফিসটি ২৯ মার্চ সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ভবনের জ্যোতির্ময় গাইনের ২২৪ নম্বর কক্ষে খোলা হয়। তার নেতৃত্বে সেখানে সুজন চন্দ্র রায়, রনি বিশ্বাসসহ একদল মেধাবী শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র সমাধানের দায়িত্বে ছিল। তারা দ্রুত সমাধান করে তা অসীম গাইনের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেন্দ্রে থাকা নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেন। 

ডিবির সাইবার ক্রাইম বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চক্রটি আগেই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নগদ, ব্যাংক চেক ও সাদা চেক নিয়ে রাখে। যাদের কাছ থেকেই এই টাকা বা চেক নিয়েছে, মূলত তাদের কাছেই সমাধান করা প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। আগেই চুক্তিতে থাকা শিক্ষার্থীদের ডিভাইস সরবরাহ করে চক্রের সদস্যরা।

ওই কর্মকর্তা বলেন, চক্রের সদস্যরা কত টাকা নিয়েছে এবং প্রশ্ন ফাঁস করে তা সমাধানের পর কতজনের কাছে সরবরাহ করেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

মাদারীপুরের পাঁচ কেন্দ্রে ফাঁস হয় প্রশ্ন: এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত মাদারীপুরের পাঁচটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সমাধান নিয়ে পরীক্ষা দেয় একদল শিক্ষার্থী। ২৯ মার্চ কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকরা আট পরীক্ষার্থীকে আটক করে। পরে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সমাধান ও ডিভাইস জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী রেজাউল করিম বাদী হয়ে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মাদারীপুরে ১৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষার সময়ে কয়েকটি কেন্দ্রে কিছু পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে (ব্যবহৃত মোবাইল) মেসেজ অপশনে উত্তরপত্রের লিখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে মাদারীপুর সদরে কুলপদ্বী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে নোমান আহম্মেদ (২৬), মাদারীপুর সরকারি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সঞ্জয় রায় (৩২), সদরের আলহাজ আমিন উদ্দিন হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে সাথী আক্তার (৩০), তৃষ্ণা বালা (২৯), শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মুক্তি বাড়ৈ (২৬), সদরের জুলিও কুরী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে দূর্গা হাওলাদার (৩২), নিপা বৈদ্য (২৭) ও শিখা কির্তনীয়াকে (৩২) আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক অসীম গাইন (৪৫) ও উজ্জ্বল সরকারকে (৩২) আসামি করা হয়।

এজাহারে বলা হয়, আসামিদের মাদারীপুর জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসৎ উপায়ে মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে পরীক্ষার উত্তর সরবরাহ করা চক্রের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ রয়েছে। আটক পরীক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তর মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে পেয়ে উত্তরপত্রে তা লিখার সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিযুক্ত কক্ষ পরিদর্শক ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের হাতে আটক হয়।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্য পেয়েও কেন পরীক্ষা বাতিল করা হলো না, তা জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মদ বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, এমন তথ্য তাদের কাছে নেই। ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সমাধান দেখে মাদারীপুরের কয়েকটি কেন্দ্রে কয়েক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে আটকের বিষয়েও তিনি অবগত নন বলে জানান। ওই ঘটনায় মামলার বিষয়েও জানেন না।

তিনি বলেন, জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি) পরীক্ষা কমিটির সভাপতি থাকেন। মাদারীপুরের ঘটনাটি সেখান থেকে কেউ অবগত করেনি।

এই পরীক্ষায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) ২১ জেলার ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042340755462646