হামাসের হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য দুই বিদ্যাপীঠ হার্ভার্ড ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির আইনের ৩ শিক্ষার্থীকে চাকরি দেয়নি অভিজাত এক ল ফার্ম বা আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েল নামে ওই ল ফার্ম বলছে, ‘ফার্মের মূল্যবোধের’ বিরুদ্ধে ওই শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেওয়ায় তাঁদের চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী কাউকেই ফার্মে চাকরি দেওয়া হবে না।
চাকরির প্রস্তাব হারানো তিন শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাঁরা হার্ভার্ড ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীল বারের পাঠানো ইমেইল যাচাই করে বিবিসি জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা অবস্থান পরিবর্তন করলে প্রতিষ্ঠানটির দরজা তাঁদের জন্য আবার খুলেও যেতে পারে।
গত মঙ্গলবার চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানায় ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েল। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার অ্যাটর্নি নিয়োগ দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় প্রায় ১৭০ কোটি ডলার। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত সম্পর্কে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতামত চাওয়া হচ্ছে, তখন আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির এই সিদ্ধান্তে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯। এর পরিপ্রেক্ষিতে হার্ভার্ড আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটি এবং আরও ৩০টিরও বেশি ছাত্র সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা, বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা সব ছাত্র সংগঠন সহিংসতার জন্য সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলি সরকারকে দায়ী করি।’
এ ঘটনার পর কয়েকটি দাতা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ দেওয়া বন্ধেরও হুমকি দেয়। হার্ভার্ড জিউয়িশ সেন্টার বিবৃতিটিকে ‘ইহুদিবিরোধী’ বলে অভিহিত করে। তাই ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েলের এ রকম প্রতিক্রিয়া একদমই অপ্রত্যাশিত নয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ও নেতারা পরে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের কথা জানান। তাঁরা দাবি করেন, সম্পূর্ণ বিবৃতিটি প্রকাশের আগে তাঁরা পড়ে দেখেননি। এর সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু সম্পর্কেও তাঁরা অবগত ছিলেন না।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা শিক্ষার্থীদের ছবি বোস্টনের বিলবোর্ডে ঝুলিয়েছে রক্ষণশীল গণমাধ্যম সংস্থা অ্যাক্যুরেসি ইন মিডিয়া (এআইএম)। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম গিলেট বিবিসিকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে বার্তাগুলো প্রকাশ করেছে, আমরা স্রেফ সেগুলোই প্রকাশ করেছি। তারা যদি তাদের কাজের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং ক্ষমা চায়, তবে আমরা তাদের ছবি তুলে নেব।‘
কলাম্বিয়ার ২০টিরও বেশি ছাত্র সংগঠন একই রকম অনেকগুলো বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। সেখানে বলা হয়, যুদ্ধ ও হতাহতের দায় নিঃসন্দেহে ইসরায়েলি চরমপন্থী সরকার এবং অন্যান্য পশ্চিমা সরকারের ওপর বর্তায়।
তবে চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যাপারে ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েলই প্রথম নয়। এর আগে উইনস্টন অ্যান্ড স্ট্রন নামের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রায়না ওয়ার্কম্যানকে দেওয়া চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে নিয়েছিল। রায়না ওয়ার্কম্যান শিক্ষার্থীদের কাছে লেখা চিঠিতে বলেছিলেন, হামাসের হামলার সম্পূর্ণ দায় ইসরায়েলের। ওয়ার্কম্যান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হিসেবে অপসারণের পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকিও তিনি পেয়েছেন।
মানবাধিকার সংগঠন দ্য ফাউন্ডেশন ফর ইনডিভিজুয়্যাল রাইটস অ্যান্ড এক্সপ্রেশন (ফায়ার) বলেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতে শিক্ষার্থীদের বাক্স্বাধীনতা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফায়ারের ক্যাম্পাস রাইট অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর অ্যালেক্স মোরে বলেন, ‘আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে করপোরেশনগুলোর চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহার করার অধিকার রয়েছে। তারা চাইলে হার্ভার্ড থেকে কাউকে নিয়োগ না-ও দিতে পারে। কিন্তু আমরা কি এমন একটি সমাজে বাস করতে চাই, যেখানে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি একই হতে হবে?’