অবৈধভাবে অতিরিক্ত বেতন ভোগ করা এমপিওভুক্ত মাদরাসার অধ্যক্ষ-সুপার ও সহকারী প্রধানরা ফেঁসে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন অবৈধভাবে এমপিওর অতিরিক্ত টাকা ভোগ করছেন বিভিন্ন মাদরাসার ১৮ জন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার ও সহকারী সুপার। অতিরিক্ত বেতন নেয়া এ মাদরাসা প্রধান ও সহকারী প্রধানদের চিহ্নিত করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত টাকা নেয়া মাদরাসা প্রধান ও সহকারী প্রধানের এমপিও স্থগিত করা হবে। আর বেতন বাবদ অতিরিক্ত নেয়া টাকা তাদের ফেরত দিতে হবে। পরে তাদের বেতন কমিয়ে অতিরিক্ত নেয়া অংশ বাদ দিয়ে এমপিও চালু করা হবে। শিগগিরই এসব মাদরাসা প্রধান ও সহকারী প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র বলছে, এক স্তরে এমপিওভুক্ত কোনো মাদরাসার পরবর্তী স্তর এমপিওভুক্ত হলে আগের প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধানদের নতুন স্তরের প্রশাসনিক পদগুলোতে এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় ওইসব পদে থাকতে পারেন। যেমন কোনো দাখিল মাদরাসা আলিম স্তর নতুন করে এমপিওভুক্ত হলে এবং ওই মাদরাসার সুপার ও সহকারী সুপারের আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ হওয়ার শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতার যোগ্যতা না থাকলেও তারা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে থাকতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে তারা মূল পদের এক কোড নিচে তাদের বেতন নির্ধারিত হয়। বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত মাদরাসার এমন ১৮ প্রধান ও সহকারী প্রধানরা এক ধাপ নিচে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত হলেও পরে অবৈধভাবে তাদের বেতন মূলপদের সমপরিমান নির্ধারিত হয়। এসব প্রধান ও সহকারী প্রধানের বেশিরভাগ দীর্ঘদিন তাদের প্রাপ্য কোডের এক কোড ওপরে এমপিও পাচ্ছেন। তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তারা কিভাবে তাদের এমপিও কোড বাড়িয়ে অতিরিক্ত বেতন ভাতা নিচ্ছেন সে বিষয়ে জানেন না অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ শাখার সহকারী পরিচালক মো. লুৎফর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মাদরাসা ওই ১৮ জন প্রধান ও সহকারী প্রধানের মধ্যে ১৭ জন এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন যখন এমপিওর প্রক্রিয়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ছিলো। বিশেষ বিবেচনায় এক কোড নিচে এমপিওভুক্ত হলেও তারা কোনো না কোনোভাবে তাদের এমপিওর কোড বাড়িয়ে নিয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত বেতন ভোগ করছেন। নানা মাধ্যমে তাদের বিষয়ে জানতে পেরে আমরা মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিও প্রক্রিয়াকরণের সফটওয়্যার মেমিসের বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালাই। আমরা অতিরিক্ত বেতন ভোগ করা ওই ১৮ জন প্রধান ও সহকারী প্রধানকে চিহ্নিত করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ওইসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে তাদের শোকজ করে অতিরিক্ত কোডে বেতন কিভাবে নির্ধারণ করেছেন ও কেনো তাদের এমপিও বন্ধ করা হবে না তার কারণ জানতে চাওয়া হবে। আমরা ওই প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধানদের এমপিও স্থগিত করবো। এমপিও স্থগিত করে অতিরিক্ত নেয়া টাকার সমপরিমান টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। তারা অতিরিক্ত টাকা সরকারকে ফেরত দিলে তাদের বেতন কমিয়ে তাদের প্রাপ্য গ্রেডে নিয়ে এসে এমপিও পুনরায় চালু করা হবে।
ওই শিক্ষকরা এমপিও প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সহযোগিতা ছাড়া কিভাবে নিজেদের বেতন কোড পরিবর্তন করতে পারলেন জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, তারা যখন এ কাজ সেরেছেন তখন মাদরাসার এমপিওর প্রক্রিয়ার দায়িত্বে ছিলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। হার্ডকপিতে যখন এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া চলতো তখন তারা বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত হয়েছেন। এরও বেশ কয়েক বছর পর মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা হয়। আমরা এখন আলাদা মেমিস সফটওয়্যারের মাধ্যমে এমপিও কার্যক্রম পরিচালনা করি। কিন্ত মেমিস সৃষ্টির পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য এনে এতে অন্তর্ভুক্ত করায় ওইসব মাদরাসা প্রধান ও সহকারী প্রধানরা অতিরিক্ত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।