দৈনিক শিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ও হল ত্যাগের ঘোষণা থেকে সরে এসেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) কর্তৃপক্ষ। তবে উদ্ভুত পরিস্থতিতে আগামীকাল রোবাবার থেকে ৯ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার, শনিবার ও মে দিবসের বন্ধসহ ১৫ দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
এ সময় আবাসিক হলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করতে পারবেন। গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১৩৩তম জরুরি সভা শেষে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রশাসন। তবে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাদের দাবি, প্রশাসনের চাপের মুখে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই আজ শনিবার থেকে আবারও আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা জানান, নিরাপদ সড়ক, চুয়েট হাসপাতালকে স্বয়ংসম্পন্ন করাসহ ১০টি দাবি তারা জানিয়েছে। প্রশাসন দাবিগুলো পূরণ না করায় তাদের আন্দোলন আজ থেকে চলবে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাসের ধাক্কায় দুছাত্রের মৃত্যুতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে আজ (শুক্রবার) সিন্ডিকেট সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ৯ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করাহ শর্তে শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবে।
এর আগে গত সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী চুয়েট শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং তাওফিক হোসাইন নিহত হন। সহপাঠী মৃত্যুর ঘটনায় টানা চারদিন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। অবরুদ্ধ ছিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়ক। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। এতে ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে ও ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা শাহ আমানত পরিবহনের দুটি বাসে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া বিকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার প্রায় দুই ঘণ্টা ওই ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন। রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মিটিং শেষে অবরোধ তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১২টায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী সিন্ডিকেট সভা হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হলে থাকার অনুমতি দেয়। গতকাল সিন্ডিকেট সভা শেষে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করে গীষ্মকালীন ছুটি ঘোষণা করে প্রশাসন।
এদিকে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে চলা শাহ আমানত ও এবি ট্রাভেলস পরিবহনের বাসগুলোর বেপরোয়া গতিতে তারা বেশ আতঙ্কগ্রস্ত। সড়কটি বেশ সরু এবং অনেক বেশি সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করার কারণে এ রাস্তায় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। মালিক পক্ষ বেশ প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষজন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। তাই চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাময়িক দুর্ভোগের স্বীকার হলেও তারা আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছিলেন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যাতে প্রচ- দাবদাহে পানিশূন্যতায় না ভোগে, সে জন্য স্যালাইন ও পানি সরবরাহ করেন।