আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত আর পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না ভারত। গত বৃহস্পতিবার এক আদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। গতকাল শুক্রবার থেকেই এ আদেশ কার্যকর হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস ও ইকোনমিক টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের নেতারা জানিয়েছেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের অবহিত করেছেন।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে দেরি হয়নি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
যদিও ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও দেশে নতুন পেঁয়াজের মৌসুম কয়েক দিন পরেই শুরু হচ্ছে। ফলে কয়েক দিন অস্থিরতা থাকলেও বাজারে খুব বেশি দিন ভারতের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থাকবে না বলে মনে করছেন ভোক্তাসাধারণ। ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সে দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সংশোধিত রপ্তানি নীতি অনুযায়ী আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। একই সঙ্গে এ সময় পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলারের সিদ্ধান্তটি বলবৎ থাকবে। তবে অন্য দেশের সরকার অনুরোধ জানালে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেবে।
ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়। প্রথমে চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। গতকাল সেটি আবার তিন মাস বাড়ানো হয়।
এ সংক্রান্ত আগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো দেশেই যেকোনো পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে। এ বিষয়ে বাধা নেই। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতি টন পেঁয়াজে ন্যূনতম ৮০০ ডলার নিতে হবে, এর নিচে নয়। জাহাজে পরিবহন ও বীমার খরচ এ দামের অন্তর্ভুক্ত নয়।
গত আগস্টে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তখন এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়, এমনকি তারা ধর্মঘটও করেন। এর মধ্যেই ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলারেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছিলেন তারা। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো চাহিদা মাফিক ঋণপত্র (এলসি) না দেওয়ায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানির পরিমাণ কমে গিয়েছে। এতে করে দেশের বাজারে কিছুদিন ধরেই পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
তিনি বলেন, আর কিছুদিনের মধ্যেই দেশের পেঁয়াজই পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে এসে যাবে। এখন কিছুদিনের জন্য যাতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকে, সেজন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সমাধানে আসার দাবি জানান এ ব্যবসায়ী।
এদিকে গতকাল সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও শ্যামবাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ৯৮-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর পাবনার পেঁয়াজ ১৩০-১৪০ এবং ফরিদপুরের ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ১৪০-১৫০, পাবনার পেঁয়াজ ১৮০-২০০ এবং ফরিদপুরের ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আবার অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে রাখেন।
জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাশার আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে শ্যামবাজারেই প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১৫-২০ টাকা বেড়ে গেছে।’
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করেই আমদানিকারকরা পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।