দেশের ২২ সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জিএসটি) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন। তবে এ নির্দেশনা অমান্য করে ৩০-এর কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম নম্বর ৩০-এর পরিবর্তে ২০ নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই উপাচার্যকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৩০-এর কম নম্বর পাওয়া তাদের স্ত্রী-সন্তানদের পোষ্য কোটায় ভর্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করছিলেন।৷ তবে শিক্ষকদের একাংশের বিরোধিতায় বিষয়টি আটকে ছিল। সর্বশেষ এ দাবি আদায়ে ১২ অক্টোবর কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় কর্মকর্তা সমিতি। এ ঘোষণার পরই ১৫ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম নম্বর কমানো হয়।
এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান বলেন, ‘এটি একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত। তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত অনুযায়ী পোষ্য কোটায় ২০ শতাংশ মার্ক প্রাপ্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়টি যখন উত্থাপন করা হয় তখন ৩৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৬ জন পোষ্য কোটায় ভর্তির ন্যূনতম নম্বর ৩০ রাখার পক্ষে মতামত দেন, ১৫ জন পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে নম্বর ২০ করার পক্ষে মতামত এবং চারজন পোষ্য কোটায় কোনো নম্বরের বাধ্যবাধকতা না রেখে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই ভর্তির পক্ষে মতামত দেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৮তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের তালিকায় নাম না থাকলে এবং ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর না পেলে কোনো ভর্তিচ্ছু পোষ্য কোটায় ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন না। পরবর্তী সময়ে ৩৩তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ওই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাডেমিক কাউন্সিলের এক সদস্য বলেন, ‘শিক্ষকদের একটি বড় অংশ এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা চাকরি করেন তারা শ্রমের বিনিময়ে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন। তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রম দিচ্ছেন এ কারণ দেখিয়ে তাদের স্ত্রী/সন্তানদের অন্যায্য সুবিধা কেন প্রদান করতে হবে? তাছাড়া তারা যখন কোটায় ভর্তি হন তখন এমনিতেও তারা একটা বাড়তি সুবিধা পান। অন্য শিক্ষার্থীরা ৪৫ পেয়েও যেখানে ভর্তি হতে পারে না সেখানে তারা ৩০ নম্বর পেয়ে ভর্তি হতে পারেন।৷ কিন্তু যখন ৩০-এর নিচে পাওয়া শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি নেয়া হয় তখন ভর্তি পরীক্ষারই কোনো গুরুত্ব থাকে না।’
উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব দাবি করছেন, ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং এর আগে পরীক্ষায় ১২ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীকেও ভর্তি করানো হয়েছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় ফেল করা শিক্ষার্থী ভর্তি করে, কত পেয়ে ফেল? ২ পেয়ে ফেল না ৫ পেয়ে ফেল? গত বছর আমরা ১২ নম্বর পর্যন্ত নিয়েছি। তখন কেউ তো কথা বলেনি! আমরা এবার ২০ নম্বর পর্যন্ত নেব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাহলে এখন কেন কথা বলছে?’
গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জিএসটিভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ মার্কের নিচে ফেল নম্বর। ৩০ নম্বরের নিচে ভর্তি করানোর কোনো সুযোগ নেই। এটি গুচ্ছের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত আছে একাডেমিক কাউন্সিল সেখানে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ফেল করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে থাকলে সেটি সম্পূর্ণ অনিয়ম। কমিশন কোটায় এ ধরনের ভর্তি বন্ধে নীতিমালার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষায় পাসই না করে তাকে তো ভর্তি করানোর সুযোগ নেই। যদি কোনো বিশেষ কোটাধারীদের জন্য পাস নম্বর কমানো হয় সেটি নিয়মের ব্যত্যয় এবং মেধাবীদের সঙ্গে অবিচার করা হবে।’