ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে আগামী ১ জানুয়ারি বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ইবতেদায়ি, দাখিল ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি বই উত্তোলনে বিদ্যালয়প্রধানদের কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পরিপত্র (লিখিত নির্দেশনা) অনুযায়ী উপজেলা সদর থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য পরিবহন ব্যয় বাবদ বইপ্রতি ২৫ পয়সা হারে দেওয়ার কথা।
সরকারের বরাদ্দকৃত সেই খরচ দেওয়া তো দূরের কথা উল্টো প্রত্যেক বিদ্যালয়প্রধানকেই বই উত্তোলন করতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫০০ টাকা করে উেকাচ দিতে হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ থাকলেও প্রশাসনিক ঝামেলার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেন না।
স্থানীয় শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, হিসাবরক্ষক জাকির হোসেন ও নিরাপত্তা প্রহরী আনোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুল কেন্দ্র থেকে উপজেলার ৬৫টি ইবতেদায়ি মাদরাসা, ৬৬টি দাখিল মাদরাসা ও ৭৭টি মাধ্যমিক-নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় আট লাখ পাঠ্য বই এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ব্যবস্থাপনায় খায়রুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক স্তরের ১৬০টি বিদ্যালয়ে প্রায় চার লাখ পাঠ্য বই সরবরাহ করা হচ্ছে।
এসব বই আগামী ১ জানুয়ারি একযোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পরিপত্র অনুযায়ী উপজেলা সদর থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য পরিবহন ব্যয় বাবদ বইপ্রতি ২৫ পয়সা হলে চলতি বছর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের আট লাখ বইয়ের পরিবহন খরচ দুই লাখ টাকা এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিবহন খরচ এক লাখ টাকা বরাদ্দ আসার কথা। বই পরিবহনের টাকার চেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে আসে; কিন্তু সরবরাহকৃত পাঠ্য বইয়ের বিপরীতে পরিবহন খরচের একটি টাকাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়া হয়নি। উল্টো মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে বই দেওয়ার সময় প্রত্যেক প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ‘হাত খরচ’, ‘লেবার খরচ’-এর কথা বলে ৫০০ টাকা করে উেকাচ আদায় করা হচ্ছে।
৫০০ টাকা করে কেন নেওয়া হয়েছে—উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক জাকির হোসেনের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘টাকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ নাই। ’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘চলতি বছর বই বিতরণ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো মিটিং হয়নি।
বই দিয়ে টাকা নেওয়ার কথাও আমার জানা নেই। ’ ইউএনও ডা. শামীম রহমান বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। ’ ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বই দেওয়ার জন্য একটি টাকাও শিক্ষকদের কাছ থেকে নেওয়ার নিয়ম নেই। টাকা নেওয়ার কথা সত্য হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’