দৈনিকশিক্ষাডটকম, দিনাজপুর : জন্মের পর থেকেই কষ্ট, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাস অর্জুন কর্মকারের। সংসারের হাল ধরতে এখন করছেন কামারের কাজ। অনেক কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে কলেজে ভর্তি হলেও বই কেনার টাকা জোগাড় করতে না পারায় ক্লাসে যাচ্ছেন না অর্জুন।
১৮ বছরের তরুণ অর্জুন কর্মকারের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে। তাঁর বাবা রিকশাচালক দুলাল কর্মকার ও মা কৃষিশ্রমিক শান্তি রানী। সংসারের অভাব-অনটন দেখেই তাঁর বেড়ে ওঠা। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী প্রদীপ কুমারের দোকানে কাজ শেখা শুরু করেন অর্জুন। লেখাপড়া আর কাজ শেখা দুটিই চলে সমানতালে।
দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় অর্জুন বাড়ির কোনায় একটি ছোট দোকান দেন। দিনের বেলা দোকানে কাজ আর রাতের বেলায় চলে পড়ালেখা। করোনা মহামারির সময় অসুস্থ বাবার আয় বন্ধ হওয়ায় সংসারের হাল ধরেন অর্জুন। সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্তই কাটে তাঁর কামারশালায়।
অর্জুন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসিতে জিপিএ–৩ দশমিক ৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে দোকানের জায়গা পরিবর্তন করেন। প্রায় এক বছর হলো নিজের গ্রামসংলগ্ন মহাসড়কের পাশে ১ হাজার ৫০০ টাকা মাসে ভাড়ায় একটি দোকান নিয়েছেন অর্জুন। দোকানের বারান্দায় চলে লৌহজাত জিনিসপত্র তৈরির কাজ। গত অক্টোবরে গ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে কাটলা ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন অর্জুন। সেখানে বাকি পড়ে আছে ভর্তি ফি। এক সেট বই কেনার টাকা জোগাড় না হওয়ায় কলেজে ক্লাসের বেঞ্চে বসা হয়নি তাঁর।
গত শুক্রবার বিকেলে দুর্গাপুর গ্রামে অর্জুনের কামারশালায় গিয়ে দেখা যায়, ভাতিতে আগুন জ্বলছে, কয়লার আগুনে গরম হচ্ছে লোহা। লাল টকটকে লোহা চিমটা দিয়ে ধরে আছে নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট ভাই অজিত কর্মকার। আর সেই গরম লোহাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কাস্তের রূপ দিচ্ছেন বড় ভাই অর্জুন। কাজের ফাঁকে কথা হলো অর্জুনের সঙ্গে। তিনি বললেন, এই কাজ করে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে চারজনের সংসার কোনোমতে চলে। বাবা অসুস্থ। একসঙ্গে এক সেট বই কেনার টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। ফলে কলেজের ক্লাসেও যেতে পাচ্ছেন না। লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা তাঁর।
এ বিষয়ে কাটলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান বলেন, কলেজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে পাঠাগার থেকে বই সংগ্রহ করে অর্জুনের বই পড়ার সুযোগ আছে। অর্জুন কলেজে এলে শিক্ষকেরাও তাঁকে লেখাপড়ার বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।