বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আবারো একটি লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। একই সাথে লিভার প্রতিস্থাপনে লিভার গ্রহীতা ও লিভার দাতা দু’জনেই সুস্থ আছেন। তারা দু’জনই দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, গত ১ জানুয়ারি অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়। ১২ ঘণ্টাব্যাপী লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন অপারেশনটিতে সহযোগিতা করেন এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়া টিম।
অধ্যাপক ডা: শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নানা ধরনের হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনসংখ্যার মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ টিকা নিয়েছে। ফলে হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রান্ত রোগব্যাধি বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে আনুমানিক ৪ থেকে ৫ হাজার রোগী লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন। প্রতি বছর রোগীদের একটি বিশাল অংশ দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে। পাশর্^বর্তী দেশসহ বহির্বিশে^ লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। ফলে দেশের স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী এ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের এ উদ্যোগ মাইলফলক হয়ে থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন বর্ষের চলতি বছরের প্রথম দিন লিভার প্রতিস্থাপন করা হয় সফলতার সাথে।
গত ১ জানুয়ারি লিভার প্রতিস্থাপনের রোগী ছিলেন বগুড়া জেলার মো: মন্তেজার রহমান (৫৩)। মন্তেজার রহমানকে লিভার দান করেন তার বোন মোসা: শামীমা আক্তার (৪৩)। শামীমা আক্তারের দেহ থেকে সুস্থ লিভারের ৬০ শতাংশ কেটে ফেলা হয়। মো: মন্তেজার রহমানের অসুস্থ লিভারের পুরোটাই কেটে ফেলা দেয়া হয়। শামীমা আক্তারের দেহ থেকে কেটে নেয়া সুস্থ লিভারের ৬০ শতাংশ মন্তেজারের দেহে জোড়া দেয়া হয়। শামীমা আক্তারের কেটে ফেলা ৬০ শতাংশ লিভার ধীরে ধীরে পূর্ণ হয়ে যাবে।
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ রোগী লিভার সংক্রান্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় (২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের সমীক্ষা অনুযায়ী)। এর মধ্যে ‘এন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজ’ হলে লিভারের কার্যক্ষমতা থাকে না। সাধারণত হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস সংক্রমণ অথবা লিভারে অতিরিক্ত চর্বিজনিত প্রদাহ থেকে লিভার টিস্যুর পরিবর্তন শুরু হয়, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক লিভার টিস্যুর পরিবর্তন হয়ে সিরোটিক লিভার টিস্যু তৈরি হয়। সিরোটিক লিভার টিস্যু স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে অক্ষম। এন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজের একমাত্র চিকিৎসা লিভার প্রতিস্থাপন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর প্রোভিসি অধ্যাপক ডা: এ কে এম মোশাররফ হোসেন, প্রোভসি অধ্যাপক ডা: ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, প্রোভিসি অধ্যাপক ডা: মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা: মাসুদা বেগম, অধ্যাপক ডা: মো: হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার ডা: স্বপন কুমার তপাদার, হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ মোহছেন চৌধুরী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ভৈরবের একটি কিশোরের দেহে লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। লিভার প্রতিস্থাপন সফল হলেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে রোগী মারা যায়।