দৈনিক শিক্ষাডটকম কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থাপনা নির্মাণের জন্য ১০৩ দশমিক ৭৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে এর উন্নয়ন, সীমানা-দেয়াল ও মূল গেট নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগ।
গত ৯ নভেম্বর একনেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন এবং আনুষঙ্গিক কাজ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করেছে।
জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এটি নির্মিতব্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিশোরগঞ্জ জেলার বৌলাই ইউনিয়নে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন জাতীয় সংসদে। কণ্ঠভোটের মাধ্যমে প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়। কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ্রহ ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদেরও।
জানা গেছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট অনুষদের সংখ্যা হলো ছয়। এই ছয় অনুষদে প্রায় ৪০টি বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ ও প্রকৌশল অনুষদ নিয়ে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চারটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। সেগুলো হলো ইনস্টিটিউট অব ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম ইনস্টিটিউট ফর অটোমেশন। ইনস্টিটিউট অব সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট। ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে নিজস্ব দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র। আরও থাকবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। সেন্টার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড সাউথ এশিয়া স্টাডিজ নামেও আরেকটি কেন্দ্র থাকছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে রয়েছে নিজস্ব সাতটি গবেষণা কেন্দ্র। এই গবেষণা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাকর্ম পরিচালিত হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জ জেলাসহ সংলগ্ন হাওর এলাকার পিছিয়ে পড়া জনপদের উন্নত ও আধুনিক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সে এলাকায় শিক্ষার মান উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, লিঙ্গসমতার উন্নয়ন অর্থাৎ নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন অনুষদের ভৌত অবকাঠামো সুবিধা সৃষ্টি করে সাধারণ, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি এবং গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করাও এ প্রকল্পটির উদ্দেশ্য।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি শতভাগ ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ আগস্ট মেয়াদে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ।
প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া মাউশি বিভাগ থেকে প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিতকরণে ডিপিপিতে এমটিবিএফ প্রত্যয়ন সংযুক্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন আরও জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১০৩ দশমিক ৭৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। অধিগ্রহণ করা ভূমির উন্নয়ন করা হবে এবং বাউন্ডারি ওয়াল ও গেট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলেও জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৫) বলা হয়েছে, শিক্ষার মান উন্নয়ন, লিঙ্গসমতা উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচিকে সামনে রেখে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া হাওর এলাকার নারী-পুরুষের সমান সুযোগ-সুবিধাসহ সমানুপাতিক হারে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বছরে তিন হাজার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান, কারিগরি, প্রকৌশল, কলা ও গণিত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
এ ছাড়া দেশের সামগ্রিক জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে বাজারনির্ভর প্রশিক্ষণ ও পাঠ্যক্রম তৈরি করার করা হবে বিধায় প্রকল্পটি সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শিক্ষা সেক্টরের উন্নয়ন কৌশলের উদ্দেশ্য ও এসডিজি লক্ষ্য-৪-এর ৪.২, ৪.৩, ৪.ধ, ৪.ন, ৪.৭ সূচকের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে জানিয়েছে কমিশন।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জুনে জারি করা সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকার অনুচ্ছেদ-৪.২.৩ অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হওয়ায় প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক অনুমোদনযোগ্য।
এমন পরিস্থিতিতে মাউশি বিভাগের আওতায় ইউজিসি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক কাজ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেকের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আগ্রহ ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের। তার আগ্রহেই সরকারের পক্ষ থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থান করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলাসহ সংলগ্ন হাওর এলাকার পিছিয়ে পড়া জনপদের উন্নত ও আধুনিক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এলাকায় শিক্ষার মান উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, লিঙ্গসমতার উন্নয়ন অর্থাৎ নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি।