বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ওপর নির্মিত একটি চলচ্চিত্র থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তার জানাজায় মানুষের উপস্থিতির একটি ছবির সঙ্গে সম্প্রতি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি কোলাজ ছবি নিজের ফেসবুকে প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার মৃত্যুর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে তার জীবনকর্মসহ বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে গত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে ‘হেয়’ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া জানাজার ওই ছবিটি শেয়ার করেন তিনি। এতে রুয়েটসহ রাজশাহীজুড়ে সমালোচনার ঝড় ও তোলপাড় শুরু হয়েছে।
অভিযুক্ত মো. মিলনুর রশিদ রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মো. মিলনুর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের উদ্দেশে নয়, বরং নিজের ফেসবুকে বিষয়টি রেখে দেওয়ার জন্য শেয়ার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সত্য কথা বলতে ফেসবুক সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানিই না, বুঝিই না। তবে কোনো কিছু ভালো লাগলে আমার ফেসবুকে শেয়ার করি।'
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন টেকনিক্যাল অফিসার হয়ে প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা নেই কেন জানতে চাইলে মো. মিলনুর রশিদ বলেন, 'এটা আমার মূর্খতা বা অজ্ঞতা। ফলে কোনো কিছু বুঝে এটা করিনি। জাস্ট শেয়ার করে রেখেছি।’
এ বিষয়ে জানতে রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মো. আল বেরুনী ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফেসবুক ব্যবহার করেন না জানিয়ে বলেন, ‘আমি কখনো ফেসবুক চালাই না, বিষয়টি আমাকে কেউ অবগতও করেনি। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল নই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা অরাজনৈতিক সংগঠন। ফলে আমাদের নীতির বাইরে গিয়ে এমন কর্মকাণ্ড করলে আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহা. ইসফাক ইয়াসশির ইপু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেশের অন্য যে কোনো মানুষের তুলনা হয় না। সুতরাং একজন মানবতাবিরোধী সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে জাতির জনকের তুলনা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারি না। আমরা রুয়েট কর্মকর্তার এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধু পরিষদ রুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান রিপন বলেন, ‘রুয়েটের ওই কর্মকর্তা জঘন্য অপরাধ করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সংবিধান স্বীকৃত একটি নাম। তার সাথে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত একজন আসামির তুলনা করা জঘন্য অপরাধের শামিল। জাতির জনককে নিয়ে এমন ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী রুয়েটের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা রুয়েট প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে রুয়েটের বঙ্গবন্ধু পরিষদের অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই বিষয়ে দ্রুত আমরা আমাদের করণীয় ঠিক ঠিক করব।’ সার্বিক বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এটা কোনো প্রফেশনাল কথা হচ্ছে না, এগুলো কোনো পলিটিক্যাল পার্টিকে জিজ্ঞাসা করেন। কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিক্যাল প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিতে পারব। ভূমিকম্প, প্ল্যানিং, আর্কিটেকচার, গাড়ি বানানো এগুলো বললে আমি উত্তর দিতে পারব।’
ফেসবুকে সাঈদীর প্রচারণা চালানো ব্যক্তি রুয়েটের কর্মকর্তা বলেই আপনাকে ফোন করা হয়েছে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি একজন ইঞ্জিনিয়ারকে, একজন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রফেশনাল কথা জিজ্ঞাসা করেন নাই। আপনি কী বলেছেন আমি শুনিও নাই। যারা পলিটিক্যাল এসব বিষয়ে আপনি তাদের প্রশ্ন করেন।’