বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) আধিপত্যের দ্বন্দ্বে সংঘটিত হামলার ঘটনায় বহিরাগতদের সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে। সর্বশেষ কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণে বেড়িয়ে আসছে গাঁ শিউরে ওঠার মতো তথ্য। এসব ঘটনায় গুরুতর আহত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী, কেউ কেউ বরণ করছেন পঙ্গুত্ব। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ শক্ত অবস্থান গ্রহণের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলে ঢুকে কুপিয়ে জখম করা হয় ছাত্রলীগের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাতসহ আরো দুজন শিক্ষার্থীকে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বহিরাগতদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। হামলার ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ যাদেরকে গ্রেফতার করেছিলো তাদের মধ্যে একাধিক বহিরাগতও ছিলেন। বর্তমানে অবশ্য তারা সকলেই জামিনে মুক্ত আছে।
এরপর গত ৫ই আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে হেলমেট ও মাক্স পরিহিত দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় ১৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পায়ের রগ কেটে দেয়া হয় মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহর। সেই ঘটনায় বহিরাগতদের জড়িত থাকার বিষয়টি এখন নতুন করে সামনে আসে।
ওই হামলার ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির এক সদস্য এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির দুই সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ওই রাতের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বহিরাগতদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ড্রেজার (বালু উত্তোলন) ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নাহিদ এবং শুভ নামে স্থানীয় দুই তরুণের নির্দেশে কতিপয় বহিরাগত যুবক ওই রাতে হামলাকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়।
গত ৫ আগস্ট হামলার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) উপাচার্যের কাছে ঐ ঘটনার বিচার চেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো একটি আবেদন দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগত প্রায় ৩০-৩৫ জন ধারালো অস্ত্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইরাজ রব্বানী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বহিরাগতদের জড়িত থাকার বিষয়টি এখন ক্যাম্পাসে এক প্রকার ওপেন সিক্রেট বিষয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত। এ ধরণের বর্বরোচিত ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে মনে করি।
সর্বশেষ হামলার ঘটনায় গঠিত অনুসন্ধান কমিটির প্রধান ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তবে ওই কমিটির সদস্য এবং কম্পিউটার ও প্রকৌশল বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাহাত হোসেন ফয়সাল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ৫ আগস্টের হামলার ঘটনায় বহিরাগতদের জড়িত থাকার প্রাথমিক কিছু অভিযোগ নজরে এসেছে। তবে অনুসন্ধান শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমরা সাদা কে সাদা এবং কালো কে কালো বলতে কোনো প্রকার অবহেলা করবো না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী বহিরাগতের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কথা জানান বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) ফজলুল করিম। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনাগুলোতে এখন পর্যন্ত যতোগুলো মামলা বা অভিযোগ হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে বহিরাগতদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করা হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে।