ববিতে শিক্ষার্থীকে রাতভর নি*র্যা*তন করে ভেঙে দেয়া হলো হাত - দৈনিকশিক্ষা

ববিতে শিক্ষার্থীকে রাতভর নি*র্যা*তন করে ভেঙে দেয়া হলো হাত

বরিশাল প্রতিনিধি |

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে কক্ষে আটকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ওই শিক্ষার্থীর নাম মুকুল আহমেদ। তিনি ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পিটিয়ে তাঁর একটি হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। 

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সহপাঠীরা তাঁকে উদ্ধার করে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।

ইংরেজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিদ মঞ্জু ও সিহাব উদ্দিন এই নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁরা মুকুলকে বঙ্গবন্ধু হলের ৪০১৮ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে বেদম মারধর করেন। এর আগে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মী আয়াত উল্লাহকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম এবং পায়ের রগ কেটে পঙ্গু করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে মঞ্জু ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট গভীর রাতে হেলমেট পরা ছাত্রলীগের একটি পক্ষ ওই হামলা করেছিল।

শিক্ষার্থীরা জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তবে তানজিদ মঞ্জুসহ একটি পক্ষ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হলটিও তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আজ শনিবার দুপুরে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, মুকুল ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তাঁর বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ করা। ভালোভাবে হাঁটতে পারছেন না। হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন মুকুল। বলেন, ‘আমি অসহায়, আমাকে বাঁচান। আমি কোনো রাজনীতি করি না।’

মুকুল বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টিউশনি করে তিনি হলে ফিরছিলেন। পথে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে দেখা হয় ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের কয়েকজন ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। মুকুল তাঁদের কাছে জানতে চান, রাতে তাঁরা ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন কেন। ওই শিক্ষার্থীরা জানান, দশম ব্যাচের (দ্বিতীয় বর্ষ) বড় ভাইয়েরা বঙ্গবন্ধু হলে ডেকেছেন। পরে মুকুল হলে ফিরে তাঁদের দশম ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপে একটি বার্তা দেন এবং লেখেন, ‘আমাদের ব্যাচের নামে ছোট ভাইদের ডাকা হয়েছে, অথচ আমরা জানি না। আগেও এভাবে ডেকে র‌্যাগিং করা হয়েছে অনেককে। তখন বিভাগের শিক্ষকদের কাছে আমাদের কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। এখন আবার ডাকা হয়েছে, আমরা জানি না, এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই না।’

মুকুল বলেন, এই কথা লেখার এক মিনিট যেতে না যেতেই তানজিদ মঞ্জু তাঁকে ফোন করে শেরেবাংলা হলের দিকে যেতে বলেন। এশার নামাজের শেষে যাওয়ার কথা বললে তখনই তাঁকে যেতে বলা হয়। রাত ৮টার দিকে মুকুল বঙ্গবন্ধু হলের পাঁচতলার নিজের কক্ষ থেকে চতুর্থ তলায় নামতেই তানজিদের সঙ্গে দেখা হয় এবং সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ তলার ৪০১৮ নম্বর কক্ষে। সেখানেই নিয়ে কক্ষের সবাইকে বের করে দিয়ে কক্ষটি আটকে দেন তানজিদ। কেন মেসেঞ্জার গ্রুপে ওই বার্তা দিয়েছেন, তার কৈফিয়ত জানতে চান। এ সময় তানজিদ বলেন, ‍‘তোর জন্য আমি একাদশ ব্যাচটাকে গোছাতে পারছি না।’ এসব বলেই শুরু করেন নির্যাতন। মঞ্জু ও তাঁর সহযোগী সিহাব তাঁকে উপর্যুপরি কিলঘুষি, লাথি এবং একপর্যায়ে জিআই পাইপ, চেয়ারের ভাঙা কাঠের হাতল দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারালে রাত তিনটার দিকে ওই কক্ষে ফেলে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে তাঁরা চলে যান। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়।

অর্থোপেডিক বিভাগের কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক মো. নাহিদ জানান, রোগীর (মুকুল) বাঁ হাতের হাড় ভেঙে গেছে। আপাতত ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে। ২১ দিন পর ব্যান্ডেজ খোলা হবে। এর পর হাড় জোড়া না লাগলে তাঁর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হবে।

মুকুলের বাড়ি নরসিংদী সদরে। তাঁর বাবা কাঠমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করে সংসার চালান। ছয় বোন, দুই ভাইয়ের বড় সংসার চলে টানাপোড়েনে। পাঁচ বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও ছোট বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। মুকুল টিউশনি করে নিজের ও বোনের পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ করেন।

তীব্র যন্ত্রণা আর নিজের অসহায়ত্বে শিশুর মতো কেঁদে মুকুল বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি না। আমি দরিদ্র বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেছি। তারা আমাকে মেরে পঙ্গু করে দিল। আমি তাদের পা ধরে বলেছি, আমার জীবনটা ভিক্ষা দিন, আমি পড়াশোনা বাদ দিয়ে একেবারে চলে যাব। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। নির্দয়ভাবে মেরেছে, এমনকি হাসপাতালেও পাঠায়নি।’

মুকুলের বাবা-মা তাঁর এই অবস্থার কথা শুনেছেন আজ সকালে। মুকুলকে ফোন করে তাঁকে পাচ্ছিলেন না। কারণ, তাঁর ফোনটিও কেড়ে নিয়েছিলেন নির্যাতনকারীরা। আজ সকালে ফোনটি ফেরত দেয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে তানজিদ মঞ্জুর মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে আজ সকাল থেকে অন্তত ১৩ বার ফোন দেয়া হয়। দুবার ফোন ধরেন তিনি। এই প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পরই তিনি ফোন কেটে দেন। পরে তাঁর ফোন থেকে এই প্রতিবেদককে ফোন করে বলা হয়, ‘মঞ্জু বাসায় নেই। বাসায় ফিরলে আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।’ এ সময় ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজের নাম ‘সবুজ’ জানান এবং তিনি ‘মঞ্জুর কাজিন’ বলে পরিচয় দেন।

অপর দিকে সিহাব উদ্দিনকে ফোন করলে তিনি এটা তাঁর নম্বর নয় বলে দাবি করেন। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটা সিহাব উদ্দিনেরই নম্বর। পরে হোয়াটসঅ্যাপেও কল করা হয়। খুদে বার্তা দিয়ে পুনরায় তাঁর বক্তব্য চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষার্থীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আজ আবার যাব এবং তার সঙ্গে কথা বলব এবং পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম আজ দুপুরে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এরই মধ্যে হলের আবাসিক শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে গিয়ে দেখে এসেছেন। আবারও তাঁরা যাবেন এবং এরপর বিষয়টি নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003554105758667