গণমাধ্যমে কথা বলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালকের পদ হারানোর অভিযোগ তোলা শিক্ষক ড.তারেক মাহমুদ আবীরকে স্বপদে বহাল করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন তারা। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আবীর স্যার দায়িত্ব নেবার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে কাজ করে আসছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্বিবদ্যালয়ের বাইরে যেখানেই শিক্ষার্থীরা কোনো বিপদে পরেছে তিনি শোনামাত্র এগিয়ে গেছেন। এমন একজন শিক্ষার্থী বান্ধব ও জনপ্রিয় শিক্ষককে প্রশাসনের উচিত ছিলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রাখা। সেখানে উল্টো শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।
তারা আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি স্যারের সঙ্গে একই দিনে একই শর্তে আরো শিক্ষকদের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা স্বপদে থাকলেও এবং অনেকে একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করলেও শুধুমাত্র আবীর স্যারকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায্য। তাই দ্রুত আবীর স্যারকে স্বপদে বহালের দাবি জানাচ্ছি। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি শিকদার, সৈয়দ মুস্তাকিম, সোহাগ মিয়া, নাহিদসহ অনেকে।
এর আগে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. তারেক মাহমুদ আবীর বলেছিলেন, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক পদে দায়িত্ব দেয়া হয় আমাকে। আমার সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডি, লাইব্রেরি এবং টিএসসিসহ মোট চারটি দপ্তরে পরিচালক পদে চারজন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়। আমাদের সবাইকে একই শর্তে নিয়োগ দেয়া হলেও গত ২১ আগস্ট শুধু আমাকেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এক ব্যাক্তিকে দুই থেকে তিনটি দপ্তরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এমনকি বর্তমানে যিনি ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনিও অন্য দায়িত্ব পালন করছেন। এরপরও আমার সঙ্গে কোনোরকম কথাবার্তা না বলে বা কোনো নোটিশ না দিয়েই হুট করে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ:
বৃহস্পতিবার সকালে দৈনিক শিক্ষা ডটকমে প্রকাশিত 'গণমাধ্যমে কথা বলায় ববির ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালককে অব্যাহতি' শিরোনামের প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফয়সাল মাহমুদ স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ড. তারেক মাহমুদ আবীর ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক থাকা অবস্থায় শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং বর্তমানে তিনি শেরে বাংলা হলে দায়িত্বরত আছেন। তাই আগেই ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য :
'গণমাধ্যমে কথা বলায় ববির ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালককে অব্যাহতি' শিরোনামে প্রতিবেদনে অভিযোগকারী শিক্ষকের ভিডিও বার্তা এবং প্রতিবেদকের কাছে দেয়া তার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। তাকে অব্যাহতির বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাঁর বক্তব্যও স্পষ্ট করে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিশ্ববদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বারবার নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা এ বিষয়ে তখন কোনো সাড়া দেননি। ভুক্তভোগী শিক্ষকের কাছ থেকে তার অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ-দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং সমস্ত প্রমাণ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।