বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের(ববি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা চারজনের পরিচয় প্রকাশ করেছেন আহতরা। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে গত ৫ই আগস্ট রাতে হেলমেট পরিহিত দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই রাতে হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন। একইসাথে হামলায় জড়িত চার শিক্ষার্থীকে আইনের আওতায় আনার দাবি তোলেন আহতরা। তবে হামলার ঘটনায় যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেন অভিযুক্তরা।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ ও সালাহ উদ্দিন।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে তারা সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে ওই দিনের ঘটনায় হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন দেয় আহতরা।
আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৫ই আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে দুর্বৃত্তদের হামলায় আমাদের সহপাঠীরা আহত হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ক্যাম্পাসে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে পৌঁছালে মাক্স ও হেলমেট পরিহিত ৩০-৩৫ জন তরুণ ধারালো অস্ত্রসহ আমাদের ওপর হামলা করে। হামলাকারীদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জু, গণিত বিভাগের রায়হান ইসলাম ও মোবাশ্বের রিদম এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শরিফুল ইসলামকে প্রাথমিকভাবে চিনতে পারি।
সংবাদ সম্মেলনে আহতরা অভিযোগ করে জানান,হামলার সময় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সেদিনের ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা ক্যাম্পাসের হলগুলো দখল করে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে এসব সন্ত্রাসীদের আগলে রাখার ভূমিকা পালন করছে তারা। এসময় দ্রুত সকল হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি তোলেন আহত দুই শিক্ষার্থী।
আহত শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ বলেন, দুর্বৃত্তরা আমার পায়ের রগ কেটে আমাকে দীর্ঘমেয়াদী পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ৫ জন সেই রাতে আহত হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েও দোষীরা কিভাবে মুক্তভাবে চলাফেরা করছে সেই প্রশ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে রইলো।
এদিকে অভিযুক্ত তানজিদ মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সেই রাতে হামলার ঘটনায় আমি আহত হয়েছি। এখন দেখছি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ওই রাতে নিজেরা মারামারি করে আহত হওয়ার পর রাজনৈতিক কারণে এখন দোষ চাপানো হচ্ছে তাদের দিকে।
প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, যে কেউ যেকোন অভিযোগ করতেই পারে। সম্প্রতি হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে মূল কারণ উদঘাটন করে প্রতিবেদন দেবেন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ও এখতিয়ার অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। তবে ফৌজদারী বা অন্যকোন অপরাধে যদি কেউ মামলা করলে সেই ঘটনায় পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। এছাড়া অভিযোগ দায়েরের পর দুই পক্ষ মীমাংসা করে ফেলায় অধিকাংশ অভিযোগকারী অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
এ বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।