বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কিংবদন্তি ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মে যশোরের ঝিনাইদহ মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন।
তারপর তার পিতা ঝিনাইদহের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসতে শুরু করেন।
ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছেড়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হোন। কিন্তু সে সময়ের ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ সরাসরি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
ছাত্রলীগের রাজনীতি এবং শিক্ষা আন্দোলনে জড়িত থাকায় তাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়ে পুনরায় সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। এরপর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন নূরে আলম সিদ্দিকী।
এরপর নূরে আলম সিদ্দিকী ৬২ খ্রিষ্টাব্দের ছাত্র আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন ও বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রেখে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হোন। ওই সময় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কও নির্বাচিত হোন নূরে আলম সিদ্দিকী।
সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর ভিপি পদেও নির্বাচিত হোন তিনি। এসময় বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার জেষ্ঠ্যজন হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন।
তারপর সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন।
শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা ও তার রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মূল্যায়নে নূরে আলম সিদ্দিকী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার প্রশ্নে আপসহীনতাই শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু করেছে। বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে অবিচল থাকায় তিনি হয়েছেন জাতির জনক। তার রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা, নিজস্ব মতামতের ওপর শ্রদ্ধা এবং তা বাস্তবায়নে সংগ্রামই সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ছাড়িয়ে তিনি হয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত মহানায়ক, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ’
দেশ স্বাধীনের পরে তিনি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। তবে ১২ জুন ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের সপ্তম ও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসনে পরাজিত হয়েছিলেন।
তারপর দলীয় সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান একসময়ের এই কিংবদন্তি ছাত্রনেতা।
বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যু হয়। তার ছেলে তাহজীব সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী বর্তমানে ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।