বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় দিন - দৈনিকশিক্ষা

বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় দিন

কাজী বনফুল |

আজ ১৭ এপ্রিল। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির-ভাস্বর ও অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে ঘোষিত হয় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এইদিন থেকে এই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের লক্ষে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়।

ওইদিন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথে যে সুর বেজে উঠেছিলো বাংলার আকাশে বাতাসে সোনার বাংলা নামক সম্মিলিত একতার সংগীতে যা ছিলো পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মানের অলিখিত স্বাধীনতার চুক্তি।  বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে  বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অঙ্গুলির দৈবিক নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাজউদ্দীন আহমদ এর সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ওইদিন যে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো বাংলার আকাশে, সে পতাকা আজও চির অম্লান হয়ে উড়ে চলছে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে।

সেদিন শুধুমাত্র একটি লাল-সবুজের রং মিশ্রিত পতাকাই ওড়ানো হয়নি তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলো বাংলার মানুষের প্রতি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর করা নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে ৭ কোটি বাঙালির প্রচণ্ড প্রতিঘাতের প্রতীক, সেদিন ওই পতাকার উত্তোলনের সঙ্গে উত্তোলিত হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের সব আশার বাতিঘর যা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাজউদ্দীন আহমদ তার হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে সেই স্বপ্ন পূরণে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন সমগ্র বাংলার মানুষকে।  ওইদিন মুজিবনগরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে শপথ তাজউদ্দীন আহমদ নিয়েছিলেন সে শথপের অভ্যন্তরীণ গভীরে যে নির্যাশ লুকায়িত ছিলো তা ছিলো মূলত বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম অযাচিত শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তির চেতনা স্বরূপ। ওই শপথের সঙ্গে আরো লুকায়িত ছিলো হাজার হাজার মা-বোনের ইজ্জত ও অধিকার ফিরিয়ে আনার দ্বায়িত্ব, যা তাজউদ্দীন আহমদ পরবর্তীতে তার কর্মের মধ্য দিয়ে পূরণ করেছিলেন। 

তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন ব্যক্তি। তাজউদ্দীন আহমদ নিজেকে সব সময় বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের অংশ বলে মনে করতেন কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাজউদ্দীন আহমদ এর আদর্শের জাগয়ায় বিশেষ কোনো ভিন্নতা ছিলো না। তাদের জন্মই যেনো বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য হয়েছিলো যেটা তারা তাদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন। 

কাজী বনফুল

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। এর আগে ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী সরকার শপথ নেয়।

১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন। তার ভাষণ আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধযুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।

সেদিনের সেই ভাষণের মাধ্যমে তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বাংলার জনগণকে উজ্জীবিত করে তাদের মধ্যে যুদ্ধের তেজ প্রবাহিত করেছিলেন। যে আগুন বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বাংলা মানুষের মধ্যে জ্বালিয়ে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ সেই আগুনে পেট্টোল ঢেলে দিয়ে যুদ্ধের জন্য সামগ্রিক ভাবে প্রস্তুত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যা ছিলো একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয়ার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

যখন কোনো মানুষের সঙ্গে মানুষের আদর্শিক মিলনের জায়গা এক হয়ে যায় তখন তা একাত্মায় পরিণত হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের জেলে বন্দি তার সেই বন্দিত্বের বেদনায় সবচেয়ে বেশি যাকে পুড়িয়েছে সেই মানুষটা তাজউদ্দীন আহমেদ। সেদিন আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে উঠেছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ এর হৃদয় এবং পুড়ে ছাড়খার হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর মুক্তির নিমিত্তে। তারা এতোটুকু বুঝতে পেরেছিলেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যতীত বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নেই। তাইতো তারা মুজিব নগরে সেদিন শপথের মাধ্যমে সারা বাংলায় ছড়িয়েছে দিয়েছিলো সংগ্রামের অগ্নিশিখা।
যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে যদি বাংলার আকাশে সূর্য হিসেবে কল্পনা করি তাহলে ঘৃণিত মোস্তাক বাদে তাজউদ্দীন আহমদসহ মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই ছিলেন সেই সূর্যের আলো স্বরূপ। যে আলোর তীব্রতায় পথ হারাতে বাধ্য হয়েছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

লেখক: কলামিস্ট

 

পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040650367736816