বাজেটের আশা হতাশা - দৈনিকশিক্ষা

বাজেটের আশা হতাশা

মনোয়ার হোসেন |

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে (২০২৩-২৪) বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য যেসব পরামর্শ দিয়েছে, সে মোতাবেক রাজস্ব বৃদ্ধির পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, সাধারণ জনগণের ধারণা, এবারের বাজেট আইএমএফ এর শর্তকে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়েছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? উত্তরে অর্থমন্ত্রী প্রথমে কোনো মন্তব্য করেননি। তারপর বলেন, বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ থেকে ঋণ চাইলে তারা তাদের কিছু প্রস্তাব দেন, যেগুলো বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন হয়। 

অর্থনীতিবিদ এবং ওয়াকিবহাল সূত্র বলছে, বাংলাদেশের এমন কী ভীষণ প্রয়োজন রয়েছে বা ছিলো যে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হতে হলো (যার পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি নয়) এবং সে কারণে তাদের শর্ত মানতে হলো। 

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যে পরিমাণ অর্থ আমরা ঋণ নিয়েছি সে পরিমাণ অর্থ দেশে দেড় মাস সময়ে রেমিট্যান্স হিসাবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠান। এ ছাড়া, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। 

‘এই দুই বিবেচনায় আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ নেয়ার যৌক্তিকতা দুর্বল হয়ে যায়’ এই বক্তব্য অর্থনীতিবিদ এবং বাজেট বিশ্লেষকদের। 
রাজস্ব আয়ে বা সংগ্রহে প্রধানতম ভূমিকা হচ্ছে রাজস্ব বোর্ডের। ফিন্যান্স বিল বা আর্থিক বিল প্রস্তুত করে রাজস্ব বোর্ড। আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা পাঁচ লাখ কোটি টাকার। রাজস্ব বোর্ড আদায় করবে চার লক্ষ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কতদূর সাফল্য অর্জন করা যাবে তা রাজস্ববোর্ডই ভালো জানে। কিন্তু যে প্রস্তাব সাধারণ মানুষকে হতচকিত করেছে তা হচ্ছে ‘টিন’ (ট্যাক্স আডেন্টিফিকেশন নাম্বার) নম্বরধারীদের ওপর কর নির্ধারণ। বিশ্লেষকরা এই প্রস্তাবকে ‘সাংঘর্ষিক’ বলছেন। কারণ, একদিকে বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তি আয়ের ওপর কর মওকুফ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, অপরদিকে ‘টিন’ থাকলেই দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। বহু টিনধারী আছেন যাদের বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকার অনেক কম। সুতরাং বার্ষিক সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা তারা পাবেন না। 

অপরদিকে, এই পদক্ষেপ বিগত বছরগুলোতে টিন সংগ্রহ করার যে আগ্রহ সাধারণ আয়ের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিলো তা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

বিশ্লেষকদের মতে, ‘সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি’ এই অঙ্গীকার সরকারের। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে এর প্রতিফলন খুবই দুর্বল। এই খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশি দেখানো হলেও তুলনামূলকভাবে কম। এ থেকে মনে হতে পারে, শিক্ষার সত্যিকার অর্থে মান বৃদ্ধির প্রয়োজন গুরুত্ব পায়নি। অবকাঠামো উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ইত্যাদি পরিবেশ উন্নয়নে অবশ্যই ভূমিকা রাখে। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে, যারা শিক্ষা দেবেন বা শিক্ষক তাদের মান উন্নয়ন। 

এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য, প্রাথমিক স্তরে ভালো মানের শিক্ষক না থাকলে ছাত্ররা মানসম্পন্ন শিক্ষা পান না। আর উন্নতমানের শিক্ষা না পেলে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ দুর্বল হয়। নামকাওয়াস্তে একটা ‘শিক্ষিত’ জনগোষ্ঠী তৈরি হতে পারে, যাদের কাছ থেকে জাতি বা দেশ কিছু পায় না। প্রাথমিক শিক্ষায় যা সর্বাগ্রে এবং সর্বোচ্চ প্রয়োজন তা হচ্ছে ভালো এবং উপযুক্ত শিক্ষক, যার অভাব আমাদের সমাজে রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন ভালো বেতন। শিক্ষকদের জন্য শুধু কিছু প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়। ভালো বেতন ছাড়া সুশিক্ষিত কেউ প্রাথমিক শিক্ষকতায় আসবেন না। আবার এলেও তুলনামূলকভাবে বেশি বেতনের কোনো চাকরি পেলে চলে যাবেন। কাজেই এই বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন ছিলো। দুঃখজনক হলেও সত্য এই বিষয়টি তেমন বিবেচনায় আসেনি।

বাজেটে আরেকটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারতো। তা হচ্ছে শহরে বিশেষ করে ঢাকা শহরে দূষণের মাত্রা কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিভিন্ন জরিপ থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হচ্ছে প্রধানত তিন প্রকারের দূষণ ঢাকা শহরকে আচ্ছন্ন করছে। এক, শব্দ দূষণ, দুই, বায়ু দূষণ আর তিন, যানজট। দূষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। এই সংস্থার কার্যকলাপ আরো বৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে। বায়ু দূষণ এবং শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে (লাউড স্পিকার ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবশ্যই) এই সংস্থা প্রতিদিন ট্রাফিক পুলিশের ন্যায় তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে। 
তাদের দরকার কিছু লোকবল আর কিছু সরঞ্জাম। অর্থাৎ পুরোপুরি তাদেরকে ‘অ্যাকটিভেট’ করতে যে সহায়তা দরকার তার ব্যবস্থা করা। এজন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং তাদের জবাবদিহিতার বিষয়টি বাজেটে উল্লেখিত হওয়ার দরকার ছিলো। কিন্তু তা হয়নি। 

লেখক: উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক আমাদের বার্তা 

 

 

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030601024627686