লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের দারুস সুন্নাহ তালিমুল কোরআন মাদরাসা ও এতিমখানা। এ প্রতিষ্ঠান প্রতি ছয় মাস পরপর ২১ জন এতিমের জন্য সরকারি বরাদ্দ পায় ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। তবে কাগজে-কলমে থাকলেও এ মাদরাসার অস্তিত্ব নেই ভবানীগঞ্জে। স্থানীয় সাধারণ মানুষ জানেন না মাদরাসার অবস্থান কোথায়। এমনকি স্থানীয় ইউপি সদস্য খুরশিদ আলমও জানেন না মাদরাসাটির অবস্থান। একই অবস্থা পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার চড়াইল খাইরুন্নেছা মুসলিম এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে। এ প্রতিষ্ঠান ৬৪ জন এতিমের বিপরীতে প্রতি ছয় মাসে টাকা নেয় ৭ লাখ ৬৮ হাজার। অথচ মাত্র দুই কক্ষের ওই মাদরাসায় মোট শিক্ষার্থীই রয়েছে ১০-১২ জন।
কেবল লক্ষ্মীপুর বা পিরোজপুরই নয়, দেশের অনেকে এতিমখানার চিত্রই এমন। সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে পুঁজি করে এতিমখানা তৈরি করা হয়। এরপর সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন করে ভুয়া এতিম দেখিয়ে বরাদ্দ নেওয়া হয় টাকা। অনেক ক্ষেত্রে এতিমখানার অস্তিত্ব নেই, কিংবা এতিমখানা থাকলেও এতিম নেই—এমন এতিমখানায়ও বরাদ্দ মেলে। যদিও স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়া এতিমখানাগুলো সাধারণ মানুষের দান-সদকা, কখনো কখনো সমাজহিতৈষী মানুষের সম্পদেই পরিচালিত হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের থেকেও নেওয়া হয় মাসভিত্তিক টাকা। তবে এর আড়ালে এতিমদের নিয়ে হয় রমরমা বাণিজ্য।
গত বছর ছয় মাস পরপর দুই কিস্তিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত এতিমখানার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে ২৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা ক্যাপিটেশন গ্রান্ট নামে পরিচিত। প্রতি এতিম শিক্ষার্থীর বিপরীতে বরাদ্দ ২ হাজার টাকা। তবে শর্ত অনুসারে সুবিধাপ্রাপ্ত এতিমখানায় ন্যূনতম ১০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। এ ছাড়া এতিমখানার মোট এতিম শিক্ষার্থীর অর্ধেক এই সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। ৬ বছরের কম এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী কেউ এই সুবিধা পাবেন না বলেও নিয়ম রয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সারাদেশে মোট ৩ হাজার ৯৯০টি এতিমখানা সরকারি সুবিধা পাচ্ছে। এতে মোট ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে অর্থ ছাড় করে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে ৪০৫ এতিমখানার বিপরীতে ৮ হাজার ৩৯৩ জন এতিম, সিলেট বিভাগে ৮৫ এতিমখানার বিপরীতে ২ হাজার ৭৩১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৩২ এতিমখানার বিপরীতে ৫ হাজার ১৯ জন, ঢাকা বিভাগে ৬৬৩ এতিমখানার বিপরীতে ১৯ হাজার ৭৩৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৫ এতিমখানার বিপরীতে ২৯ হাজার ১০৫ জন, খুলনা বিভাগে ৪০৫ এতিমখানার বিপরীতে ১০ হাজার ৫৮৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৪৯৪ জনের বিপরীতে ১২ হাজার ৭৬৫ জন এতিম এই সুবিধাপ্রাপ্ত হন।
ভান্ডারিয়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা দেড় লাখের মতো। ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত এতিমখানার সংখ্যা ২৮টি। ১ হাজার ৪৭৬ এতিমের বিপরীতে এই উপজেলায় কেবল ছয় মাসে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ ১২ হাজার টাকা। নিয়ম অনুসারে সুবিধাভোগী এতিমের চেয়ে এতিমখানায় এতিমের সংখ্যা দ্বিগুণ থাকতে হবে। সে হিসাবে ভান্ডারিয়া উপজেলায় এতিমখানায় থাকা এতিমের সংখ্যাই কেবল তিন হাজারের মতো।
তবে স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলছেন, একটা ছোট্ট উপজেলায় এতসংখ্যক এতিম থাকার সুযোগ নেই। মূলত বরাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারা করতেই বেশিসংখ্যক এতিম দেখানো হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানা ঘুরেও দেখা গেছে এমন চিত্র।
নদমূলা সরদার বাড়ি দারুল উলুম লিল্লাহ বোডিং ও এতিমখানায় খাতা কলমে ২৬ জন এতিম থাকার কথা। তবে ওই এতিমখানায় একজনও পাওয়া যায়নি। যদিও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক হাফেজ মো. ইব্রাহীম হোসেন জানান, এতিম শিক্ষার্থীরা ছুটি নিয়ে বাড়িতে গেছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ও পৌর এলাকার ৩৬টি এতিমখানায় কাগজে-কলমে মোট ১ হাজার ৩০ জন এতিম দেখালেও বাস্তবে তা নেই। অনেক জায়গায় কেবল নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড, একজন এতিমও নেই। গ্রামের মাদরাসা ছাত্রদের বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে ভুয়া এতিম বানানো হয়েছে অনেককে।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ শামছুল ইসলাম এতিমখানায় এতিম আছে ৭ জন। এ প্রতিষ্ঠানের দুটি নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নেই। আটিয়াতলী জালালিয়া কওমি মাদরাসা ও এতিমখানায় ১৬ জন এতিমের বিপরীতে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সরেজমিন এ নামে মাদরাসা পাওয়া যায়নি। তবে মারকাযুল উলুম জালালিয়া মাদরাসা নামের একটি মাদরাসার অস্তিত্ব রয়েছে। সেখানে দুজন এতিম শিক্ষার্থী রয়েছে। একজন এতিম শিক্ষার্থী জানান, তার বাবা নেই। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা সবাই বাড়ি থেকে এসেই পড়াশোনা করেন। সরকারি বরাদ্দের টাকার বিষয়ে তারা কিছুই জানে না।
মাদরাসার পরিচালক তবারক উল্যা জসীম বলেন, এ মাদরাসায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দুস্থ। তাদের কারও থেকে খরচ নেওয়া হয় না। গন্ধর্ব্যপুর মাওলানা মোস্তফা মিয়া নুরানি ইসলামিয়া এতিমখানায় ২৭ এতিমের জন্য বরাদ্দ হয় ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এটির অবকাঠামো চিত্র নীতিমালার ধারে-কাছেও নেই। একটি ঝুপড়ি ঘরে এতিমখানায় ৮ থেকে ১০ জন ছাত্রের দেখা মিললেও এতিমের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এতিমখানার সভাপতি আব্দুল গাফফার জানান, অনেক কষ্টে এতিমখানাটি চালিয়ে যেতে হয়। এখানে যারা পড়ে, তারা সবাই দুস্থ।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটেশন গ্রান্টের বরাদ্দ পাচ্ছে সব প্রতিষ্ঠান। তিনি নিজে সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন। সব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে বৃত্তির সুবিধাপ্রাপ্ত এতিমের তালিকায় সবাই এতিম নয় এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো সংকটের কথা তিনি স্বীকার করেন।
টাঙ্গাইলে এতিমখানায় ভুয়া এতিমের তালিকা করে সরকারি বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এতিমখানা ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তারা। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন কালিহাতি উপজেলার মাদরাসার এক সহকারী পরিচালক। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।
সরেজমিন কালিহাতি উপজেলায় ধলা টেংগর এতিমখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তালা ঝুলছে। মোবাইল ফোনে এতিমখানার পরিচালক মহর আলীর সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, সব এতিম নিয়ে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সভার জন্য টাকা কালেকশনের কাজে বের হয়েছেন। এতিম শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, এতিমখানায় ২৫ জন আছে। একই উপজেলার কদিমহামজানি এতিমখানায় সংখ্যার চেয়ে ৫২ জনকে ভুয়া এতিম বানিয়ে বরাদ্দের টাকা তোলেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ জুলফিকার বলেন, আমরা ৬৬ জনের টাকা তুলি। তবে ওই মাদরাসায় এতিমের সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। সেই হিসাবে সাতজনের জন্য বরাদ্দ পাওয়ার কথা। প্রতিষ্ঠানের কোষাধ্যক্ষ যদিও জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ১৪ এতিম আছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে গরিব ছাত্রের সংখ্যা বেশি; তাই হাজিরা খাতায় একই স্থানে তালিকা করে ৬৬ জনের টাকা তুলি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম কোনো কথা বলেননি। তবে সমাজসেবা অফিসার (রেজি.) নাজমুল হাসান তথ্য নেওয়ার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেন। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, তথ্য যাচাই-বাছাই করে এতিমের টাকা দেওয়া উচিত। সমাজসেবা সঠিকভাবে যাতে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দের টাকা বিতরণ করে সেদিকে নজর দেওয়া হবে।
রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এতিমখানা ও শিশু সদন রয়েছে বাগমারা উপজেলায়। এরপর রয়েছে মোহনপুর ও মহানগরীতে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৪টি ক্যাপিটেশন গ্রান্টপ্রাপ্ত এতিমখানা ও শিশু সদনগুলোতে অবস্থানরত অধিকাংশ শিশুদের মা-বাবা থাকলেও কাগজে-কলমে তাদের এতিম ও দুস্থ দেখিয়ে আনা হয় সরকারি বরাদ্দ। বাগমারা উপজেলার আচিনঘাট ও ডোখলপাড়া শিশু সদন এবং মোহনপুর উপজেলার ধরইল ইসলামিয়া এতিমখানা এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, এসব শিশু সদন-হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার অধিকাংশ শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা গ্রামের লোকজন করেন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে বিভিন্ন মৌসুমের ফসল ও চাঁদা সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রদের খাওয়ার খরচ ও শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা করা হয়।
রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোছা. হাসিনা মমতাজ বলেন, অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে এরই মধ্যে একটি এতিমখানার বরাদ্দ বন্ধ ও কয়েকটি বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন মেহেরপুরের বিভিন্ন এতিমখানায় গিয়ে প্রমাণ মেলে অনিয়মের। এর মধ্যে মালসাদহ পূর্বপাড়া এতিমখানা সিদ্দিকীয়া হাফেজিয়া মাদরাসা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৩০ জন এতিম নেই। রয়েছে সাকুল্য ৮-১০ জন। গাংনীর বাদিয়াপাড়া মহব্বতপুরের মহসিনিয়া এতিমখানায় লিস্টে ৬০ এতিম দেখানো হলেও সেখানে প্রকৃত এতিম আছে ২১ জন, তবে এতিম, দুস্থসহ মোট ৫৬ নিবাসী পাওয়া যায়। সরকারি বরাদ্দ পাচ্ছে ৩০ জনের। একই অবস্থা গাংনীর মানিকদিয়া এগারোপাড়া এতিমখানা ও দারুসসুন্নাত লিল্লাহ বোডিং ও কুটির শিল্প সংস্থার। গোভীপুর দাখিল মাদরাসা লিল্লাহ বোডিং ও এতিমখানায় এতিম এবং দুস্থ মিলিয়ে মোট ১৫ নিবাসীর বিপরীতে ২০ এতিমের বরাদ্দ দেখা যায়। মুজিবনগর উপজেলায় বরাদ্দপ্রাপ্ত দারিয়াপুর হাফিজিয়া এতিমখানা ও ভবরপাড়া এতিমখানায় নিবাসী ও বরাদ্দের সংখ্যার মিল পেলেও প্রকৃত এতিমের সংখ্যা অনেক কম।
মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কাজী কাদের মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এতিমখানায় যে অনিয়ম হয় না, এমন নয়। আমরা এরই মধ্যে অনেকের ক্যাপিটেশন গ্রান্ট সমন্বয় করেছি।
মাদারীপুরে সরকারি অনুদান পাওয়া বিভিন্ন মাদরাসা ঘুরে পাওয়া গেছে অভিন্ন তথ্য। কোনো কোনো মাদরাসায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করা হয়। শাহমাদার দরগা শরিফ এতিমখানায় ১৪৫ জন এতিমের বিপরীতে ১৭ লাখ ৭৪ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এর দ্বিগুণ এতিম থাকার কথা থাকলেও মাদরাসায় এতিমের সংখ্যা অনেক কম। এ ছাড়া ইসলামিক ইয়াতিম প্রকল্প, মৌলভী আচমত আলী খান হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার চিত্রও একই। পাঁচখোলা হাজির নবাব আলী এতিমখানায় ৮০ জন এতিমের জন্য বরাদ্দ পান। সেই হিসাবে এতিমের সংখ্যা হওয়ার কথা ১৬০ জন। তবে মাদরাসায় এতিমের দেখা মেলেনি।
সম্প্রতি সরেজমিন পাবনার বিভিন্ন এতিমখানায় দেখা যায়, পাবনার পৌর এলাকার মাওলানা জিল্লুর রহমান এতিমখানা, জামেয়া আশরাফিয়া এতিমখানা, পাবনা ইসলামিয়া এতিমখানা ও দুস্থ কল্যাণ সংস্থা, পৈলানপুর কাদেরিয়া সিদ্দিকিয়া এতিমখানা, দারুল উলুম মাদরাসায়ে ফুরফুরা শরিফ ও লিল্লাহ বোডিং এতিমখানাসহ আরও বেশ কয়েকটি এতিমখানায় এতিমের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কাগজে-কলমে এতিম দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করছে সংশ্লিষ্টরা।
রাজবাড়ীতে হাতে গোনা দু-চারটি বাদে জেলার প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের চিত্র অভিন্ন। এমনও এতিমখানা রয়েছে, যেখানে কোনো এতিম নেই অথচ এতিমদের নাম দেখিয়ে নেওয়া হয় মাসিক সরকারি ভাতা। আবার অনেকক্ষেত্রে মাদরাসার আবাসিক ছাত্রদের ভুয়া এতিম দেখিয়ে নেওয়া হচ্ছে সরকারি বরাদ্দ। সরেজমিন দেখা যায়, জেলার পাংশা উপজেলার পুইজোর বাজারে অবস্থিত পুইজোর সিদ্দিকীয়া শিশু সদন নামে রাস্তার পাশে একটি সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও এতিমখানার কোনো কার্যক্রম নেই। তবে একটি মাদরাসা রয়েছে। তেমনিভাবে জেলার কালুখালী উপজেলার হোগলাডাংগি এলাকায় অবস্থিত হোগলাডাংগি ইসলামীয়া শিশু সদনের নামে একটি জরাজীর্ণ সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও এতিমখানার কোনো কার্যক্রম নেই। সেখানে হোগলাডাংগি মোহাম্মাদীয়া ইসলামিয়া মডেল কামিল মাদরাসা নামে মাদরাসার কার্যক্রম দেখা যায়। স্থানীয়দের দাবি, মাদরাসার ছাত্রদের দিয়েই ভুয়া এতিমখানার কার্যক্রম দেখানো হয়। রাজবাড়ী জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।
জামালপুরে ভুয়া এতিমের তালিকা তৈরি করে এতিমের নামে বরাদ্দের টাকা তুলছেন একজন চেয়ারম্যান। এমনই অভিযোগ উঠেছে জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। নিজ গ্রামে ‘যদি মামুদ মুন্সি এতিম খানা’ প্রতিষ্ঠা করেন চেয়ারম্যান। এর পাশে প্রতিষ্ঠা করেন একই নামে হাফেজিয়া মাদরাসা । মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নামে ১৫ জনের ভুয়া এতিমের তালিকা তৈরি করে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে টাকা উত্তোলন করে আসছেন। সরেজমিন দেখা যায়, সমাজসেবা অফিসের তালিকায় অনুদানপ্রাপ্ত ১৫ এতিমের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এতিম রয়েছে দুজন। তারা হলো তিতপল্যা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মরহুম উমর ফারুকের ছেলে রহমতুল্লাহ তুহিন ও শেরপুরের আয়না গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ মাসুম। অনুদানপ্রাপ্ত দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনুদানের টাকা প্রাপ্তির ব্যাপারে কিছুই জানে না, শুধু স্বাক্ষর দেয়। এদিকে বাকি ১৩ জনের স্বাক্ষরও একইভাবে আদায় করা হয়। জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কারখানাপাড়া গ্রামীণ এতিমখানা বন্ধ রয়েছে। যদিও সেখানে ২০ জন এতিমের টাকা তোলা হয়েছে।
এতিমের নামে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে মো.আজিজুর রহমান বলেন, এতিম পাব কোথায়, এতিম বলতে কিছু নেই, হতদরিদ্ররাই এতিম। সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শাহাদৎ হোসেন বলেন, যদি মামুদ মুন্সি এতিম খানায় ১৫ এতিমের নামে জনপ্রতি মাসে দুই হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোনো জনপ্রতিনিধি যদি ভুয়া তালিকা দিয়ে এতিমের টাকা উত্তোলন করে তাহলে কী বলব? মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নওগাঁসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলায় সরেজমিন মিলেছে অনিয়মের এমন অভিন্ন চিত্র।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, যে কোনো অবজারভেশেনরই কিছু বিষয় আছে। আপনাদের তথ্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে দেখতে হবে এটি প্রতিনিধিত্বশীল কিনা, যতগুলো কেস এর মধ্যে প্রতিনিধিত্বশীল হলে মিনিমাম একটা সংখ্যা হতে হয়। তবে কিছু ব্যতিক্রম জিনিস থাকে। আমরাও কিছু পেয়ে থাকি। তথ্য আসলে তদন্ত করি। ত্রুটি পেলে ব্যবস্থা নেই।
সূত্র : দৈনিক কালবেলা