চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম আকাশ বাসের ধাক্কায় নিহত হন। এর প্রতিবাদে আজ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিভাগের ব্যানারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে যোগ দিয়েছেন নিহতের সহপাঠী ও রাজনীতি বিজ্ঞানের ৪৭ব্যাচের রায়হান আহমেদ এবং হাসান উদ্দিন হিমেল।
জানা গেছে, নিহত মো. নজরুল ইসলাম আকাশ চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত শুক্রবার সকালে কুমিল্লার গৌরীপুরে বেপরোয়া গতির একটি বাসের (নিউ হানিফ) সাথে ধাক্কা লেগে তিনি নিহত হন।
রায়হান আহমেদের সঞ্চালনায় রাজনীতির অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যাহ পাটোয়ারী বলেন, আমার ছাত্র নজরুল ইসলাম খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার পিতা ঠেলাগাড়ির চালক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ঠেলাগাড়ি বিক্রি করে তাকে পড়ালেখা করিয়েছে তার পিতা। আজ সে নেই। তার পিতা এখন অসুস্থ এবং মা ক্যান্সারের রোগী। এ অবস্থায় এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। পরিবহন সেক্টরের সিন্ডিকেটের ফলে এমন বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর সাহস দিন দিন বেড়ে চলেছে। পরিবহন সেক্টরের মাফিয়া চক্র ক্ষতিপূরণ দেয়নি। এমনকি মামলা করতে গেলেও বাঁধা দিয়েছে।
চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, একজন মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক পরিশ্রম করেছে। সে আজ নিহত। আজকে যদি তার পরিবার প্রভাবশালী হতো তাহলে দেশের আইন তৎপর হতে উঠতো। পুলিশ প্রশাসন তৎপর থাকতো। শুধুমাত্র একলক্ষ টাকার বিনিময়ে কম্প্রোমাইজ করা হতো না।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছে। তাদের জন্য দেশের প্রশাসনের সহযোগিতার মনোভাব কতটা তা আমি জানি না। তিনি নিজেকে নিজে ধিক্কার জানিয়ে বলেন, শুধুমাত্র সামাজিক অবস্থান এবং আর্থিক দীনতার কারণে ন্যায়বিচার পাবে না তা হতে পারে না।
এছাড়াও তিনি নজরুল ইসলামের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বাস কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করার জন্য রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানান। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকবৃন্দ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন রাজনীতি বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখেয়ার উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাবিবা ও শারমিলা কবির।
উল্লেখ্য, নজরুল চট্টগ্রামের পটিয়া সেন্ট্রাল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ছিলেন। পটিয়া থেকে অন্য একটি চাকরির ইন্টারভিউর জন্য বাসযোগে ঢাকা যাচ্ছিলেন তিনি। পথিমধ্যে কুমিল্লার গৌরিপুর এলাকায় তিনি বাস থেকে নামলে পেছন থেকে আরেকটি (নিউ হানিফ) বাস এসে তাকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে গৌরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।